কোরবানী ঈদ ২০২৪ । কুরবানী কার উপর ওয়াজিব । কুরবানী সম্পর্কে আলোচনা

প্রিয় পাঠক আর কিছুদিন পরেই কোরবানী ঈদ ২০২৪ পালিত হবে । আপনারা অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন কোরবানী ঈদ ২০২৪ কবে , কুরবানী কার উপর ওয়াজিব ? , কোরবানির পশুর বর্ণনা , যে সকল পশু দ্বারা কুরবানী হয় না , কুরবানী করার ‍নিয়ম এবং কুরবানী সম্পর্কে আলোচনা।
কোরবানী ঈদ ২০২৪ । কুরবানী কার উপর ওয়াজিব । কুরবানী সম্পর্কে আলোচনা
তাই আজকে আমরা আপনাদের সামনে কোরবানী ঈদ ২০২৪ পালিত হবে কবে , কুরবানীর উদ্দেশ্য ও ফজিলত, কুরবানীর পশুর বর্ণনা ,কুরবানী কার উপর ওয়াজিব , যে সকল পশু দ্বারা কুরবানী হয় না , কুরবানী করার নিয়ম এবং কুরবানী সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই আমাদের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।

কোরবানী ঈদ ২০২৪ । কুরবানী কার উপর ওয়াজিব । কুরবানী সম্পর্কে আলোচনা

কুরবানী শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ- নিকট হওয়া। আর ইসলামি শরিয়তে এর অর্থ হলো, প্রত্যেক ঐ বস্তু যার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জন করা যায়। চাই তা জবাই করা যায় এমন প্রাণী হোক বা অন্য কোনো জিনিস হোক।

কোরবানী ঈদ ২০২৪

জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহার নামাজের পরবর্তী সময় হতে জিলহজের দিন ১২ তারিখের সূর্যাস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কুরবানী করা যায় । কিন্তু প্রথম দিন কুরবানী করা সর্বোত্তম, অতঃপর তার পরের দিন উত্তম, অতঃপর তার পরের দিন তথা শেষ দিন কুরবানী করা উত্তম ।

সে হিসেবে বাংলাদেশে কোরবানী ঈদ ২০২৪ পালিত হবে ১৬ জুন ২০২৪ অথবা ১৭ জুন ২০২৪ তারিখে। যা চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল।

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব

কুরবানী প্রত্যেক মালিকে নিসাবের ওপর ওয়াজিব, অর্থাৎ কুরবানীর দিনসমূহের মধ্যে যার নিকট ৭.৫ তোলা স্বর্ণ অথবা ৫২.৫ তোলা রৌপ্য অথবা তার সমপরিমাণ টাকা বা সম্পদ মওজুদ থাকে তার ওপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত চারটি । অর্থাৎ, যার নিকট এ চারটি শর্তই বিদ্যমান থাকবে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। সে চারটি শর্ত হলোঃ-
  1. মুসলমান হওয়া,
  2. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া,
  3. আজাদ তথা দাস না হওয়া,
  4. মুসাফির না হওয়া

কুরবানীর উদ্দেশ্য ও ফজিলত

কুরবানীর উদ্দেশ্য

কুরবানী করা যেহেতু মুসলমানের ইবাদত, তাই আবশ্যকভাবে এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি এবং নৈকট্য অর্জন করা। কুরবানীর মাধ্যমেই আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন যে, তাদের ঈমান কতটুকু মজবুত এবং তারা আল্লাহ তা'আলাকে কতটুকু ভয় করে। 
আল্লাহ তা'আলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন -লাই ইয়ানা-লাল্লাহা লুহুমুহা ওয়ালা দিমাউহা ওয়া লা-কিহঁ ইয়ানা-লুহুত্ তাক্বওয়া মিনকুম ।অর্থ : তোমরা যে পশু কুরবানী করো তার গোশত কিংবা রক্ত আল্লাহর নিকটে পৌঁছে না ; আল্লাহ তা'আলার নিকট শুধু তোমাদের তাকওয়া (খোদাভীতি) পৌঁছে।

অতএব আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে আমাদের কুরবানী করা অবশ্য কর্তব্য, অন্যথা কুরবানীতো আদায় হবেই না ; বরং কঠিন গুনাগার হতে হবে।

কুরবানীর ফজিলত

কুরবানীর সওয়াব অত্যন্ত বেশি। হুযূর (সা.) বলেছেন- কুরবানীর দিনে আল্লাহ তা'আলার নিকট অধিক প্রিয় কুরবানী অপেক্ষা আর কিছুই নেই। কুরবানীর দিনে তা-ই সর্বপ্রধান নেক কাজ। কুরবানীর প্রথম যে রক্তের ফোটা পড়ে, তা পড়ার পূর্বেই কুরবানী আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। অতএব খুশিমনে ভক্তি ও আগ্রহের সাথে উত্তম পশু কুরবানী করা উচিত।

হুজুর (সা.) আরো বলেছেন: কুরবানীর পশুর প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে একেকটি নেকি লেখা হয়। সুবহানাল্লাহ ! চিন্তা করুন এটা অপেক্ষা সৌভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারে। একটি কুরবানী করে কত হাজার হাজার, লাখ লাখ ছওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। একটি বকরির গায়ের পশম সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণনা করে শেষ করা যায় না। 
চিন্তা করুন কুরবানীর মধ্যে কি পরিমাণ নেকি লাভ করা যায়। অতএব কেউ যদি সম্পদশালী ও সাহেবে নিসাব নাও হয়, তবুও সওয়াবের আশায় তার কুরবানী করা উচিত। কেননা এ সময় চলে গেলে এরূপ অনায়াসে এত অধিক নেকি অর্জনের সুযোগ আর পাওয়া যাবে না।

কুরবানী আদায় না করা একটি অন্যায়। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যারা কুরবানী করার ক্ষমতা রাখে অথচ কুরবানী করে না তবে সে আমার দলের নিকটবর্তীও যেন না হয়। আল্লাহ তা'আলার অগণিত নিয়ামতরাশি অনবরত ভোগ করা সত্ত্বেও তাঁরই নির্দেশে তাঁরই উদ্দেশ্যে সামান্য কুরবানী করতে যে পশ্চাদপদ হয় তার মতো হতভাগ্য আর কে আছে! গুনাহর কথা তো আছেই ।

কুরবানীর পশুর বর্ণনা

গরু, ছাগল, উট, দুম্বা, ভেড়া, মহিষ ইত্যাদি হালাল পশু দ্বারা কুরবানী করতে হয়। কুরবানীর পশু মোটাতাজা, সুস্থ ও সবল দেখতে সুন্দর হওয়া আবশ্যক। খোড়া, কানা, অন্ধ, পীড়িত, অতি দুর্বল, অত্যন্ত বৃদ্ধ, লেজ কাটা, দাঁতহীন, পাগল ইত্যাদি পশু দ্বারা কুরবানী জায়েজ নয়। কুরবানীর পশু সর্ব দিক দিয়ে নিখুঁত হওয়া চাই। পশুর কান বা লেজ অর্ধেকের বেশি (মতভেদে) এক-তৃতীয়াংশের বেশি কাটা বা ভাঙ্গা থাকলে কুরবানী হবে না ।

কুরবানীর পশুর বয়স

ছাগল ও ভেড়া এক বৎসরের, দুম্বা ছয় মাসের, গরু ও মহিষ দুই বৎসরের, উট পাঁচ বৎসরের হওয়া আবশ্যক। এর বত্যিক্রম হলে কুরবানী জায়েজ হবে না। কিন্তু দুম্বা ছাগল ছয় মাসের মোটাতাজা হলে দেখতে এক বৎসরের মতো, তা দ্বারা জায়েজ হবে।

কুরবানীর গোশত ও অংশ

দুম্বা, ভেড়া, ছাগল একজনের নামে একটি এবং মহিষ, উট ও গরু সাত নামের জন্য একটিকে কুরবানী করা জায়েজ আছে। সাত জনের কমেও জায়েজ হবে। কুরবানীর অংশের সাথে আকিকা করাও জায়েজ আছে। 

কুরবানীর গোশত তিন ভাগের একভাগ এতিম-মিসকিনকে দান করে দেবেন এবং তিন ভাগের একভাগ নিজ আত্মীয় স্বজনদেরকে দেবেন এবং তিনভাগের একভাগ নিজে রাখবেন। এর ব্যতিক্রম করলে কুরবানীর উদ্দেশ্য ঠিক থাকে না। কিন্তু সংসারের লোকসংখ্যা বেশি থাকলে কিংবা মেহমান থাকলে কিছু বেশি রাখা বৈধ আছে।
কুরবানীর চামড়া নিজে ব্যবহার করতে পারবেন। কুরবানীর চামড়া বিক্রয় করলে তা এতিম-মিসকিনদের হক। যে ব্যক্তি কুরবানী করবে, সে জিলহজের চাঁদ দেখা হতে নখ, চুল ইত্যাদি কাটা বন্ধ করবে এবং কুরবানী করার পরে হাজামত করবে, এটা সুন্নত।

যে সকল পশু দ্বারা কুরবানী হয় না

যে সকল পশু দ্বারা কুরবানী হয় না সেগুলো হলো-
  1. বন্য পশু,
  2. যার লেজ বা কানের এক-তৃতীয়াংশ কেটে গেছে,
  3. অন্ধ পশু, যার জ্যোতি এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়ে গেছে,
  4. যে পশু এত শক্তিহীন যে, জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না। যে পশুর এক পা ভাঙ্গার কারণে তিন পা দ্বারা চলে চতুর্থ পা দ্বারা কোনো সাহায্য পায় না।
  5. যে পশুর মোটেও দাঁত নেই বা এক-তৃতীয়াংশ বা তার বেশি নেই,
  6. যে পশুর জন্ম হতে কান নেই, কিংবা খুব ছোট তা দ্বারা কুরবানী জায়েজ। তবে জন্ম হতে যার এক কান তা দ্বারা জায়েজ হবে না।
  7. যে পশুর শিং মূল হতে ভেঙ্গে গেছে, তবে যার জন্ম হতে শিং নেই বা ভেঙ্গে গেছে কিন্তু মূল আছে তা হতে কুরবানী হবে।
  8. যে পশুর খুজলি পাঁচড়া বা অন্য কোনো কারণে দেহ সম্পূর্ণ কুশ্রী হয়েছে।

কুরবানী করার নিয়ম

ঈদুল আজহার নামাজ যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি আদায় করে কুরবানীর পশু জবাই করার জন্য প্রস্তুত হবে । নিজ হাতে পশু জবাই করাই উত্তম। নিজে অক্ষম হলে জবাই বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো আলেম বা পরহেজগার লোক দ্বারা জবাই করাবেন। 

কুরবানীদাতাগণ জবাইয়ের সময় সকলের উপস্থিত থাকা ভালো। মহিলাদের পর্দার খেলাফ হলে উপস্থিত হবেন না। জবাইকারীকে সকলের নাম অবগত করাবেন। কুরবানীর পশুটি দক্ষিণ দিকে মাথা দিয়ে কেবলামুখি করিয়ে শোয়ায়ে নিম্নলিখিত দোয়া পাঠ করবেন-
ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিইয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানীফাওঁ ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন ; ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রাব্বিল 'আ-লামীন, লা-শারীকালাহু ওয়া বিযা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন ; আল্লাহুম্মা মিন্‌কা ওয়া লাকা ।

এই দোয়া পড়ে - বিসমিল্লা-হি আল্লাহু আকবার বলে ভালো ধারালো ছুরি দ্বারা জবাই করবেন। অতঃপর নিম্নের দোয়া পাঠ করবে-আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া খালীলিকা ইব্রাহীমা আলাইহিমাস্ সালাতু ওয়াস্সালাম ।

কুরবানী সম্পর্কীয় কতিপয় মাসআলা

  • যার ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব । মালিকে নিসাব ব্যতীত কারো ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও কুরবানী করলে বহু ছওয়াবের অধিকারী হবে ।
  • মুসাফিরের ওপর (মুসাফিরী হলে) কুরবানী ওয়াজিব নয় ।
  • দশ-ই জিলহজ হতে বারোই জিলহজের সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট তিনদিন কুরবানী করার সময় । এই তিন দিনের যেদিন ইচ্ছা কুরবানী করা যায়। অবশ্য প্রথম দিন করা সর্বোত্তম, তারপর দ্বিতীয় দিন, তারপর তৃতীয় দিন ।
  • বকরা ঈদের নামাজের আগে কুরবানী করা জায়েজ নয়, নামাজের পর করবেন।
  • বারোই জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত কুরবানী করা জায়েজ আছে; সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে আর কুরবানী করা জায়েজ নয় ।
  • কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে দু'টি রাত্রি আসে, সে দুই রাত্রেও কুরবানী করা জায়েজ আছে, কিন্তু তা করা ভালো নয়।
  • কোনো ব্যক্তি দশ ও এগারো জিলহজ সফরে ছিল বা গরিব ছিল, বা প্রবাসেই কোনো স্থানে পনেরো দিন থাকার নিয়ত করল, এমতাবস্থায় তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব হবে ।
  • নিজের কুরবানী নিজেই করা মোস্তাহাব, নিজে জবাই করতে না পারলে অন্যের দ্বারা করাবে। কিন্তু নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভালো।
  • কুরবানী করার সময় মুখে নিয়ত ও দোয়া উচ্চারণ করা বাধ্যতামূলক নয়। যদি শুধু অন্তরে নিয়ত করে এবং মুখে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার দোয়া ও নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বেশি ভালো । আল্লাহু আকবার বলে জবাই করে, তাতেই কুরবানী জায়েজ হবে।
  • কুরবানী শুধু নিজের তরফ হতেই করা ওয়াজিব, সন্তান- সন্ততির পক্ষ হতে নয়; বরং নাবালেগ সন্তান মালদার হলেও তার পক্ষ হতে কুরবানী করা ওয়াজিব হবে না।
  • বকরি, খাসি, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ, উট প্রভৃতি জন্তুর দ্বারা কুরবানী করা বৈধ। অন্য কোনো জন্তু দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ নয় ।
  • গাভী, মহিষ ও উট প্রভৃতি বৃহৎ শ্রেণীর যে কোনো একটি জন্তু দ্বারা শরিকে ০৭ জন পর্যন্ত কুরবানী করা জায়েজ রয়েছে। কিন্তু তার শর্ত এই যে, একজনের অংশ যেন এক-সপ্তমাংশের চেয়ে কম না হয় আর প্রত্যেকের নিয়ত যেন হয় কুরবানী অথবা আকিকা করা হয় । আর যদি অংশীদারদের কারো অংশ এক-সপ্তাংশ হতে কম হয়, তবে অংশীদারদের কারো কুরবানী জায়েজ হবে না।
  • যদি একটি গরুতে সাত জনের কম পাঁচ ছয় জন শরিক হয় এবং কারো অংশ এক-সপ্তমাংশ হতে কম না হয়, তবে সকলের কুরবানী জায়েজ হবে। আর শরিক ০৮ জন হলে আর কারো কুরবানী জায়েজ হবে না ।
  • যদি গরু ক্রয় করার পূর্বেই সাতজন অংশীদার হয়ে সকলে মিলে খরিদ করে, তবে তা খুবই উত্তম। আর যদি কেউ একা একটি গরু কুরবানীর জন্য খরিদ করে এবং মনে এই ধারণা রাখে যে, পরে আরো লোক শরিক করে তাদের সঙ্গে একসাথে কুরবানী করব, তবে তাও জায়েজ।
  • কুরবানীর জন্তু হারিয়ে গেলেও তৎপরিবর্তে আর একটি খরিদ করলে (পরে) প্রথম জন্তুটিও পাওয়া গেলে তবে যদি ক্রেতা সম্পদশালী হয়, তার প্রতি তার একটি জন্তু কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। আর যদি গরিব হয়, কুরবানী ওয়াজিব নয়, তবে তার দু'টি জন্তুই কুরবানী করা ওয়াজিব হবে।
  • যে জন্তুর দু'টি চোখ বা একটি চোখ পূর্ণ অন্ধ বা একটি চোখের তিন ভাগের এক ভাগ বা তারও বেশি দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে, তার কুরবানী জায়েজ নয়। এরূপ যে জন্তুর একটি কানের বা লেজের এক-তৃতীয়াংশ বা তদপেক্ষা বেশি কেটে গিয়েছে, সে জন্তুরও কুরবানী জায়েজ নয় ।
  • যে জন্তু এমন খোঁড়া যে, মাত্র তিন পায়ের ওপর ভর দিয়ে চলে, চতুর্থ পা মাটি স্পর্শ করেই না অথবা মাটিতে (তা) লাগে বটে কিন্তু তার ওপর ভর দিতে পারে না, এরূপ জন্তুর কুরবানী জায়েজ নয়। আর যদি খোঁড়া পায়ের ওপর ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে চলে, তবে সে জন্তুর কুরবানী জায়েজ আছে।
  • জন্তু যদি এমন কৃশ ও শীর্ণ হয় যে, তার হাড়ের মধ্যকার মগজও শুকিয়ে গেছে, তবে সে জন্তুর কুরবানী জায়েজ নয়। হাড়ের ভিতরের মগজ যদি না শুকিয়ে থাকে, তবে কুরবানী জায়েজ আছে 
  • যে জন্তুর দাঁতও নেই সে জন্তুর কুরবানী জায়েজ নয়। আর যদি দাঁত অর্ধেকের কম পড়ে গিয়ে থাকে তবে তার কুরবানী দুরস্ত। ২৩. মাসআলা : যে জন্তুর কান জন্ম হতেই নেই তার কুরবানী কান আছে, কিন্তু তা অত্যন্ত ছোট, তবে তার কুরবানী জায়েজ আছে।
  • যে জন্তুর শিং কোনো দিন ওঠেনি বা শিং ওঠেছিল কিন্তু ভেঙ্গে গেছে, তার দ্বারা কুরবানী জায়েজ আছে। অবশ্য যদি একেবারে মূল হতে ওঠে যায়, তবে তার কুরবানী জায়েজ নয়।
  • নিখুঁত জন্তু ক্রয়ের পরে যদি এমন কোনো দোষ হয়ে যায় যে কারণে কুরবানী জায়েজ হয় না, তবে ঐ জন্তুটি রেখে দিয়ে অন্য একটি জন্তু কিনে কুরবানী করতে হবে। অবশ্য যার ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, নিজেই আগ্রহ করে কুরবানী করার জন্য ক্রয় করেছে, সে ঐ জন্তুটিই কুরবানী করে দেবে। আর অন্য একটি কেনা তার জন্য জরুরি নয়।
  • কুরবানীর গোশ্ত নিজে ও নিজের পরিবারবর্গ (সকলেই) খাবেন , আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া-তোহফা দেবেন, গরিব মিসকিনদেরকে এক- তৃতীয়াংশ দান করবেন। অবশ্য দান তদপেক্ষা কম করলে গুনাহ হবেন না ।
  • কুরবানীর চামড়া দান-খয়রাত করে দেবে। কিন্তু চামড়া বিক্রয় করলে ঠিক সেই বিক্রয় মূল্যই গরিবকে দান করতে হবে। ঐ পয়সা নিজে খরচ করে অন্য পয়সা দান করলে আদায় হয়ে যাবে বটে কিন্তু তা অন্যায় কাজ ।
  • কুরবানীর চামড়ার মূল্য মসজিদ মাদ্রাসা মেরামত করা বা অন্য কোনো নেক কাজে খরচ করা জায়েজ নয় ; বরং এটা দান করবেন।
  • কুরবানীর জন্তু জবাইকারী ও গোশত প্রস্তুতকারীর পারিশ্রমিক পৃথকভাবে দিয়ে দেবেন। কুরবানীর গোশত, চামড়া ইত্যাদি দ্বারা দেবেন না ।
  • কুরবানীর জন্তুর রশি-দড়ি ইত্যাদি গরিবদেরকে দান করে দেবেন, নিজের কোনো কাজে লাগাবেন না ।
  • যার ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, কিন্তু সে যদি কুরবানী করার নিয়তে পশু ক্রয় করে, তবে তার নিয়তের কারণে সেই পশু কুরবানী করা তার ওপর ওয়াজিব হয়ে যাবে।
  • যদি কেউ নিজের খুশিতে কোনো মৃতের রুহে ছওয়াব পৌঁছাবার উদ্দেশ্যে কুরবানী করে, তবে তার গোশ্ত নিজের খাওয়া বা যাকে ইচ্ছা দান করা জায়েজ আছে।
  • কিন্তু যদি কোনো মৃতব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে কুরবানীর জন্য অসিয়ত করে থাকে, তবে সেই গোশত সবই গরিবদের মাঝে দান করে দেওয়া ওয়াজিব হবে ।
  • কারো অনুপস্থিতিতে যদি অন্য কেউ তার পক্ষ হতে তার অনুমতি ব্যতিরেকে কুরবানী করে, তবে কুরবানী সহীহ হবে না। আর যদি জন্তুর মধ্যে অনুপস্থিত ব্যক্তির অংশ তার অনুমতি ব্যতিরেকে সাব্যস্ত করে, তবে অন্যান্য অংশীদারের কুরবানীও সহীহ হবে না ।
  • যদি একটি গরু কয়েকজনে মিলে কুরবানী করে এবং প্রত্যেকেরই তা গরিব মিসকিনকে বিলিয়ে দেয়ার ও পাকিয়ে খাওয়াবার নিয়ত হয়, তবে তাও জায়েজ আছে। অবশ্য যদি ভাগ করতে হয় তবে দাঁড়িপাল্লা দিয়ে মেপে সুষ্ঠুভাবে সমান মতো ভাগ করে নেওয়া চাই ।
  • কুরবানীর চামড়ার পয়সা পারিশ্রমিক স্বরূপ দেওয়া জায়েজ নয়। কেননা তা দান করে দেওয়া আবশ্যক

কোরবানী ঈদ ২০২৪ । কুরবানী কার উপর ওয়াজিব । কুরবানী সম্পর্কে আলোচনা :লেখক এর মতামত

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে কোরবানী ঈদ ২০২৪ পালিত হবে কবে , কুরবানীর উদ্দেশ্য ও ফজিলত, কুরবানী কার উপর ওয়াজিব , কুরবানীর পশুর বর্ণনা , যে সকল পশু দ্বারা কুরবানী হয় না , কুরবানী করার নিয়ম এবং কুরবানী সম্পর্কে আলোচনা করলাম।

এ সংক্রান্ত আপনাদের যে কোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। খুব দ্রুত আমরা আপনাদের প্রশ্ন এবং মতামতের উত্তর প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।।ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা