ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি । ওযু করার নিয়ম

প্রিয় পাঠক পাক-পবিত্র থাকার জন্য ওযু করার নিয়ম জানা খুবই জরুরী। আজকে আমরা আপনাদের সামনে ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি , ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি , ওযু করার নিয়ম এবং অজু সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি । ওযু করার নিয়ম
আমাদের আজকের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি  ওযুর নিয়ত , ওযুর ফরজ সমূহ , ওযুর প্রকারভেদ , ওযু করার নিয়ম , ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কী কী এবং ওযু সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ন কিছু মাসআলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি । ওযু করার নিয়ম

ওযুর নিয়ত

নাওয়াইতু আন আতাওয়াদ্ব দ্বাআ লিরাইল হাদাসি ওয়াসতি বাহাতান লিসসালা-তি ওয়া তাকাররুবান ইলাল্লাহি তা'আলা ।
অর্থ : আমি নাপাকি দূর করার, শুদ্ধরূপে নামাজ পড়ার ও আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ওযু করতেছি।

ওযুর ফরজ

ওযুর ফরজ ০৪ টি। তার কোনো টি বাদ পড়লে ওযু হবে না, ০৪ টি কাজ হচ্ছে :
  1. কপালের উপরিভাগে চুল ওঠার স্থান হতে থুতনির নিচ পর্যন্ত এবং পার্শ্বের দিকে দুই কানের লতি পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ধৌত করা,
  2. দুই হাত কনুইসহ ধৌত করা,
  3. মস্তকের চার ভাগের এক ভাগ মাসাহ করা এবং
  4. উভয় পা টাখনুর গিরা পর্যন্ত ধৌত করা ।

ওযুর সুন্নত 

ওযুর সুন্নত সর্বমোট ১৬ টি । যথা :-
  1. ওযুর নিয়ত করা ।
  2. ওযু আরম্ভ করবার সময় ‘বিসমিল্লাহ' পড়া,
  3. দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা,
  4. মিসওয়াক বা দাঁতন দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করা,
  5.  প্রত্যেকবারে নতুন পানি নিয়ে তিন বার কুলি করা,
  6. রোজাদার না হলে কুলিতে গড়গড় করা,
  7. প্রত্যেকবারে নতুন পানি নিয়ে নাক সাফ করা,
  8. দাড়ি খিলাল করা,
  9. উভয় হাতের অঙ্গুলি খিলাল করা,
  10. ওযুর প্রত্যেক অঙ্গ তিন তিনবার ধৌত করা,
  11. সারা মাথা ০১ বার মাসাহ করা,
  12. উভয় কান মাসাহ করা,
  13. ওযুর ফরজ আদায়কালে ক্রমধারা ঠিক রাখা,
  14. এক অঙ্গ না শুকাতে অপর অঙ্গ ধৌত করা,
  15. হাত ও পায়ের অঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে ধোয়া আরম্ভ করা,
  16. উভয় পায়ের অঙ্গুলগুলো খিলাল করা।

ওযু করার নিয়ম

  • কা'বা শরীফের দিকে মুখ করে ওযু করতে বসবেন।
  •  পানির পাত্র নিজের বাম পাশে রেখে 'বিসমিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম' দোয়াটি পড়বেন।
  • তারপর ওযুর নিয়ত করবেন। আরবি নিয়ত না জানলে বা মুখস্থ না থাকলে বাংলাতেই নিয়ত করবেন।
  • তারপর প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত কব্জি পর্যন্ত ভালোরূপে তিনবার ধুবেন ।
  • তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে মুখে দিয়ে কুলি করবেন। এভাবে তিনবার করবেন।রোজাদার না হলে কুলিতে গড়গড়া করবেন। মুখের ভিতরে কিংবা দাঁতের ফাঁকে যেন খাদ্যকণা না থাকে সেভাবে কুলি করবেন।
  • মিসওয়াক বা অন্য কোনো দাঁতন দ্বারা শাহাদত অঙ্গুলির সাহায্যে দাঁতগুলো ঘষে-মেজে ফেলবেন।
  • তারপর ডান হাতে তিন বার নাকে পানি দেবে এবং বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করিয়ে নাক পরিষ্কার করবেন।
  • তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে দু' হাতের সাহায্যে কপালের উপরিভাগে চুল গজাবার স্থান হতে থুতনির নিচ পর্যন্ত এবং পাশের দিকে দু' কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত মুখ মণ্ডল তিনবার ধুবেন।
  • অতঃপর প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবেন।
  • তারপর দু' হাতে পানি নিয়ে মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা অঙ্গুলিগুলোর পেট দ্বারা মাথার উপরিভাগে সামনের দিক হতে পিছন দিকে মাসাহ করবেন এবং পিছন দিক হতে হাত ফিরিয়ে আনার সময় মাথার দুই পার্শ্ব দুই হাতের তালু দ্বারা মাসাহ করে আসবেন।
  • তারপর নতুন পানি না নিয়ে পূর্বে ভিজানো দু' হাতের দু' তর্জনী অঙ্গুলি কানের ছিদ্রে প্রবেশ করিয়ে কানের ভিতর মাসাহ করবেন এবং দু' হাতের দু' বৃদ্ধাঙ্গুলির পেট দ্বারা কানের বাইরের দিক মাসাহ করবেন। ডান হাতে ডান কান ও বাম হাতে বাম কান মাসাহ করবে ।
  • তারপর দু' হাতের অঙ্গুলিগুলোর পিঠ দ্বারা একবার গলা মাসাহ করবেন।
  • তারপর প্রথমে ডান পা এবং পরে বাম পা তিনবার গিরা পর্যন্ত ভালোভাবে ধুবেন এবং বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা ডান পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলির নিচের দিক হতে খিলাল আরম্ভ করে বাম পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলিতে শেষ করবেন।

ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কী কী

ওযুর নিয়ত , ফরজ, সুন্নত, ওযু করার নিয়ম জানার পর প্রিয় পাঠক চলুন এবার আমরা ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কী কী তা জেনে নেই। নিচে ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি তা আলোচনা করা হল---

নিচের ০৮ টি কারণসমূহের যে কোন একটি ঘটলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে যায় । যথা
  1.  বাহ্য-প্রসাবের রাস্তা দিয়ে মল, মূত্র, বায়ু, বীর্য, ক্রিমি ইত্যাদি কোনো কিছু বের হওয়া।
  2. শরীরের কোনো স্থান হতে রক্ত, পুঁজ ও দুষিত পানি গড়িয়ে পড়া।
  3. দাঁতের মাড়ি হতে ঐ পরিমাণ রক্ত বের হওয়া যাতে থুথুর বর্ণ লাল হয়ে যায় । কিন্তু থুতুর বর্ণ পরিবর্তিত না হলে ওযু নষ্ট হবে না।
  4. মুখ ভরা বমি হওয়া । মুখ ভরা কফ ওঠলে ওযু নষ্ট হয় না ।
  5. চিৎ বা কাত হয়ে বা কোনো বস্তুতে ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া
  6. উন্মাদ, মাতাল বা অন্য কোনো কারণে অচেতন হয়ে পড়া।
  7. স্বামী-স্ত্রী পরস্পর কামোত্তেজনা সহকারে নগ্নদেহে মিলিত (সঙ্গমে নয়) হওয়া।
  8. উটের গোশত খাওয়া কারণে,

ওযুর প্রকারভেদ

ওযু  ০৩ প্রকার । যথা-
  • ফরজ
  • ওয়াজিব
  • মোস্তাহাব
ফরজ ওযুঃ নামাজের জন্য ওযু করা, যদিও নফল নামাজ হয় । জানাযার নামাজের জন্য, তিলাওয়াতে সিজদার জন্য, কুরআন মাজীদ স্পর্শ করার জন্য, যদিও একটি মাত্র আয়াত হয় তবুও ওযু করা ফরজ।
ওয়াজিব ওযুঃ কা'বা শরীফ তওয়াফ করার জন্য ওযু করা।
মোস্তাহাব ওযুঃ নিম্নবর্ণিত সকল কারণে ওযু করা মোস্তাহাব--
  • মহানবী (সা.)-এর মাজার মোবারক জেয়ারত করার জন্য
  • ওযু সহকারে ঘুম যাওয়ার জন্য,
  •  নিদ্রা থেকে  ঘুম  হওয়ার পর,
  • সর্বদা ওযু সহকারে থাকার জন্য,
  • ওযু থাকা সত্ত্বেও কোনো নেক আমল আদায়ের জন্য পুনরায় ওযু করা,
  • যে কোনো গুনাহের কাজের পর,
  • মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পর,
  • জানাযা বহন করার পর,
  • ওযু থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেক নামাজের সময় হলে,
  • ফরজ গোসলের পূর্বে,
  • কুরআন মাজীদ স্পর্শ না করে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করার জন্য,
  • হাদীস পড়ার জন্য,
  • আযান দেয়ার জন্য,
  • একামত দেয়ার জন্য,
  • খুতবা পাঠের জন্য,

ওযু সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ন  কিছু মাসআলা

  • কোনো কোনো মহিলার ধারণা, ওযু করার পর কোনো বেগানা পুরুষের সাথে সাক্ষাৎ হলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায়। এটা তাদের ভুল ধারণা । যাদের সঙ্গে দেখা দেয়া দুরস্ত নেই, এরূপ কোনো পুরুষের সাথে সাক্ষাৎ হলে পর্দা অমান্যের কারণে গুনাহগার হবে, কিন্তু ওযু নষ্ট হবে না। আর যাদের সাথে দেখা দেয়া জায়েজ আছে, তাদের সামনে গেলে ওযু নষ্ট হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না ।
  • ওযুর ফরজ কাজগুলো করতে ক্রমধারা ঠিক রাখার অর্থ প্রথমে মুখমণ্ডল ধৌত করা, তারপর হাত ধৌত করা, তারপর মাথা মাসাহ করা এবং সর্বশেষে পা ধৌত করা । এ নিয়মের ব্যতিক্রম করলে সুন্নতের খেলাফ করা হবে।
  • পুরুষগণ ওযুর সময় মুখমণ্ডল তিনবার ধোয়ার পর দাড়ি খিলাল করবে, অর্থাৎ ভিজা হাতের আঙুলসমূহ দাড়ির ভিতর প্রবেশ করিয়ে দাড়ি ভিজাবে, তবে তিনবারের বেশি যেন না হয় ।
  • ওযুর সময় দাড়ি ও কানের মধ্যবর্তী স্থানটুকু ধোয়া ফরজ, সেখানে চাই দাড়ি থাকুক বা না থাকুন ।
  • ওযুর মধ্যে থুতনি ধৌত করা ফরজ, চাই তার ওপর দাড়ি থাকুক বা না থাকুক।
  • মুখ বন্ধ করলে ঠোঁটের যে অংশ স্বাভাবিকভাবে বাইরে দেখা যায়, তাও ওযু র মধ্যে ধোয়া ফরজ।
  • দাড়ি, মোচ, ভ্রু ঘন হওয়ার দরুন তার গোড়ার চামড়া না দেখা গেলে তা ধোয়া ফরজ নয়; বরং ঐ দাড়িকে চামড়ার বদল ধরতে হবে এবং দাড়ির ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করলেই ফরজ আদায় হয়ে যাবে।
  • দাড়ি, মোচ ও ভ্রু এমন পাতলা যে, নিচের চামড়া দেখা যায়, তবে মুখমণ্ডলের সীমার মধ্যের দাড়ি ধোয়াও ফরজ, বাইরের দাড়ি নয় ।
  • যদি বিনা উত্তেজনায় যেমন: কোনো ভারী বোঝা ওঠানোর ফলে বা ওপর হতে নিচে পড়ে যাওয়ার ফলে মনী তথা বীর্য বের হয়, এমতাবস্থায় ওযু ভঙ্গ হবে, কিন্তু গোসল ফরজ হবে না ।
  • বেহুঁশ বা পাগল হলে ওযু ভেঙ্গে যাবে, তবে যদি মস্তিষ্ক সামান্য পরিমাণে বিকৃত হয় এবং তাতে বেহুঁশ বা পাগল না হয়, তাহলে ওযু ভঙ্গ হবে না।

ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি । ওযু করার নিয়ম : লেখক এর মতামত

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে ওযুর নিয়ত , ওযুর ফরজ সমূহ , ওযুর প্রকারভেদ , ওযু করার নিয়ম , ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কী কী এবং ওযু সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ন কিছু মাসআলা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।

এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। খুব দ্রুত আমরা আপনাদের প্রশ্ন এবং মতামতের উত্তর প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।।ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা