ঈমান কাকে বলে । ঈমানের মূল বিষয় কয়টি । ঈমান কত প্রকার

প্রিয় পাঠক একজন মুসলমানের সবথেকে দামি সম্পদ ঈমান । কিন্তু আমরা কি জানি ঈমান কাকে বলে ? , ঈমানের মূল বিষয় কয়টি , ঈমানে মুজমাল , ঈমানে মুফাসসাল , ইত্যাদি সম্পর্কে। যদি না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য।
ঈমান কাকে বলে । ঈমানের মূল বিষয় কয়টি
আমাদের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি ঈমান কাকে বলে ? , ঈমানের মূল বিষয় কয়টি , ঈমানে মুজমাল , ঈমানে মুফাসসাল , ঈমানের সাতটি মূল বিষয় কি কি , ঈমান কত প্রকার ইত্যাদি সম্পর্কে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

ঈমান কাকে বলে । ঈমানের মূল বিষয় কয়টি । ঈমান কত প্রকার

ঈমান কাকে বলে ?

'ঈমান' শব্দের অর্থ হলো- বিশ্বাস করা। আসমান ও জমিন এবং এতে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টি করেছেন। তিনিই এগুলোর পরিচালক ও প্রতিপালক। প্রাণীজগতের হায়াত ও মউত, রক্ষণাবেক্ষণ, লয়-প্রলয় একমাত্র তাঁরই ইচ্ছাধীন। তিনি যখন যা ইচ্ছা করেন তখনই তা হয়ে যায়। এই বিশ্বচরাচরের তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন ।

যুগে যুগে তাঁর সৃষ্ট মানবজাতির জন্য সত্যের সন্ধান ও অসত্যের অবসানকারী হিসেবে উত্তম চরিত্রের অধিকারী মহামানবদেরকে নবী বা রাসলূরূপে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আবার হযরত জিবরাঈল (আ.) ফেরেশতার মারফত তাঁদের নিকট ‘ওহী’ বা মানুষের জীবন বিধান পাঠিয়েছেন।
এই পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী; আল্লাহ্ প্রদত্ত নির্দিষ্ট সময় ফুরিয়ে গেলে সকলকেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে আল্লাহ্ তা'আলার দরবারে উপস্থিত হতে হবে। মৃত্যুর পরে হযরত ইসরাফীল (আ.)-এর শিঙ্গার ফুৎকারে কিয়ামতের মাঠে হিসাব-নিকাশের জন্য পুনর্জীবিত হতে হবে।

দুনিয়ায় অবস্থান করে যা কিছু আমল করে গিয়েছে প্রত্যেকের আমল অনুসারে নেক বান্দাকে আল্লাহ্ তা'আলা বেহেশত দান করবেন আর বদকার পাপী বান্দারা দোজখে পতিত হবে। উল্লিখিত বিষয়াবলী এবং আরো কতিপয় আনুষঙ্গিক বিষয়ের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করার নামই 'ঈমান'।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন: ইয়া আয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানূ হাল আদুল্লুকুম্ 'আলা তিজারাতি তুনজীকুম্ মিন আযাবিন আলীম । তু'মিনূনা বিল্লাহি ওয়া রাসূলিহী... ।
অর্থ : হে বিশ্বাসীগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসার কথা শিক্ষা দেব না, যা দ্বারা তোমরা জাহান্নামের কঠিন আজাব হতে মুক্তি পাবে? তা এই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান (বিশ্বাস) আনা অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাদের হুকুম-আহকাম মান্য করে, তাঁর সাথে কোনো প্রকার শরিক করে না ।

উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর প্রতি বিশ্বাস (ঈমান) স্থাপন করাকে ব্যাবসা নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ব্যাবসার লাভ নির্ধারণ করা হয়েছে আখিরাতের আজাব হতে নাজাত বা মুক্তি। প্রকৃতপক্ষে আখিরাতের নাজাতই সত্যিকারের নাজাত, আখিরাতের সফলতাই সত্যিকারের সফলতা, আর সেই সফলতা বা নাজাত লাভ করবে শুধুমাত্র ঈমানদারগণ।
কুরআন মাজীদে আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন: ঈমানদার বান্দাগণ অবশ্যই সফলতা লাভ করবে। অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে- ওয়া মাঁইইউশরিক বিল্লাহি ফাক্বাদ্ হাররামাল্লাহু আলাইহিল জান্নাতা । অর্থ : আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সাথে শরিক করে, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা তার ওপর বেহেশত হারাম করে দেবেন।

অন্য এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে: মান আমিলা সালিহাম্ মিন যাকারিন আও উনসা ওয়া হুয়া মু'মিনুন ফাউলাইকা ইয়াদখুলূনাল জান্নাতা । অর্থ : যারা সৎকাজ করবে সে পুরুষ হোক কিংবা নারী হোক যদি ঈমানদার হয়, তাহলে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে।
কুরআন মাজীদে আরো ইরশাদ হয়েছে: ইন্নাল্লাহা লা ইয়াগফিরু আঁইয়ুশরাকা বিহী ওয়া ইয়াফিরু মা-দূনা যালিকা লিমাইয়্যাশা । অর্থ : নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর সাথে শরিক করা মার্জনা করবেন না এবং এতদ্ব্যতীত যা হোক যার জন্য ইচ্ছা করেন, মার্জনা করবেন।

কুরআন মাজীদের অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে: আল্লাহু ওলিয়্যুল লাযীনা আমানূ ইউখরিজুহুম্ মিনায্ যুলুমাতি ইলান্ নূর । অর্থ : আল্লাহ্ তা'আলা ঈমানদারগণের বন্ধু, তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে বের করে সত্যের আলোতে পৌঁছে দেন ।

হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলে করীম (সা.) বলেছেনঃ লা ইয়াদখুলুল জান্নাতা কাফিরুওঁ ওয়ালা ইয়াদখুলুন নারাল মু'মিনু।অর্থ : কোনো কাফির ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করবে না এবং কোনো মু'মিন বান্দা দোযখে যাবে না।
হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছেঃ ওয়া মাল্ লাকিয়ানী বিকুরাবিল আরদ্বি খাত্বীআতাল্ লা ইউরিক বী শাইয়াল্ লাকীতুহু মাগফিরাতান ।অর্থ : আর যে ব্যক্তি জমিন পরিমাণ গুনাহসহ আমার সাথে সাক্ষাৎ করে, যদি আমার সাথে কোনো বস্তু শরিক না করে, তবে তা মার্জনা করে তার সাথে সাক্ষাৎ করব।

আল্লাহ তা'আলা কুরআন মাজীদের অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেনঃ ওয়াল্লাযীনা আমানূ ওয়া আমিলুস্ সালিহাতি উলাহিকা আসহাবুল জান্নাতি হুম ফীহা খালিদূন ।অর্থ : যারা ঈমান গ্রহণ করেছে ও নেক আমল (কাজ) করেছে, তারাই জান্নাতবাসী, তারা তার ভিতরে চিরকাল বসবাস করবে।

ঈমানের মূল বিষয় কয়টি ?

ঈমানের মূল বিষয় ৭টি। এগুলো হলঃ
  1. আল্লাহ তা'আলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা,
  2. ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা
  3. আসমানী কিতাবের মধ্যে ‘কুরআন মাজীদ সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কিতাব তা বিশ্বাস করা,
  4. সমস্ত রাসূলগণের প্রতি এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) শেষ নবী তা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা,
  5. তাক্বদীর বা ভাগ্যলিপির ভালো-মন্দ আল্লাহ্ তা'আলার তরফ হতে তা বিশ্বাস করা,
  6. কিয়ামতের দিবসের কথা বিশ্বাস করা,
  7. মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের ওপর বিশ্বাস করা ।

ঈমান কত প্রকার

ঈমান দুই প্রকার । যথাঃ
  1. ঈমানে মুজমাল,
  2. ঈমানে মুফাসসাল

ঈমানে মুজমাল

ঈমানে মুজমাল এর অর্থ- সংক্ষিপ্ত ঈমান। অর্থাৎ আমরা যে কালিমা পাঠ করে আমাদের ঈমানের বিষয়টি সংক্ষিপ্ত ভাষায় প্রকাশ করে থাকি, তাকে ঈমানে মুজমাল বলে। যেমনঃ

আমানতু বিল্লাহি কামা হুয়া বিআসমাইহী ওয়া সিফাতিহী ওয়াক্বাবিল্‌তু জামী'আ আকামিহী ওয়া আরকানিহী ।

অর্থ : আল্লাহ্ তা'আলার যাবতীয় নাম ও গুণাবলীসমূহ স্বীকার করে তাঁর প্রতি ঈমান আনলাম এবং তাঁর যাবতীয় হুকুম-আহকাম ও নিয়মাবলী কবুল করলাম ।

ঈমানে মুফাসসাল

ঈমানে মুফাসসাল এর অর্থ- বিস্তারিত বিশ্বাস এ কালিমার দ্বারা ঈমানের বিষয়সমূহের কথা ভিন্ন ভিন্নভাবে উল্লেখ করা অতএব এ কালিমার নাম হয়েছে ঈমানে মুফাসসাল । যেমনঃ 
আমাতু বিল্লাহি ওয়া মালাইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রসুলীহি ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি ওয়াল কাদরি খাইরিহী ওয়া শাররিহী মিনাল্লাহি তাআলা ওয়ালবা'সি বা'দাল মাউত ।

অর্থ : আমি আল্লাহ্ তা'আলার ওপর, তাঁর ফেরেশতাগণের ওপর রাসূলগণের ওপর, কিয়ামতের ওপর এবং অদৃষ্টের ও পুনরুত্থানের ওপর বিশ্বাস ও  আস্থা স্থাপন করলাম ।

ঈমান কাকে বলে । ঈমানের মূল বিষয় কয়টি । ঈমান কত প্রকার : লেখক এর মতামত

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে ঈমান কাকে বলে ? , ঈমানের মূল বিষয় কয়টি , ঈমানে মুজমাল , ঈমানে মুফাসসাল , ঈমানের সাতটি মূল বিষয় কি কি , ঈমান কত প্রকার ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।

এ সংক্রান্ত আপনাদের যে কোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। খুব দ্রুত আমরা আপনাদের প্রশ্ন এবং মতামতের উত্তর প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।।ধন্যবাদ।।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা