ফরজ গোসলের নিয়ম । কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয়

প্রিয় পাঠক আমরা সকলেই জানি পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। পবিত্রতা অর্জনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে গোসল। আজকে আমরা আপনাদের সামনে ফরজ গোসলের নিয়ম , গোসল ফরজ হওয়ার কারণ , কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয় সহ গোসলের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছি।
ফরজ গোসলের নিয়ম । কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয়
আমাদের আজকের পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি ফরজ গোসলের নিয়ম , গোসল ফরজ হওয়ার কারণ , গোসলের ফরজ কয়টি , কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয় , ওয়াজিব গোসল , সুন্নত গোসল, মুস্তাহাব গোসল এবং গোসল সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মাসাআলা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

ফরজ গোসলের নিয়ম । কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয়

শরীরের ময়লা ও দুর্গন্ধ দূর করা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সকল মানুষের জন্য গোসল করা কর্তব্য। ইসলাম ধর্মে সব সময় পবিত্র থাকায় গুরুত্বপূর্ণ প্রদান করা হয়। তাই আমাদের সকলের উচিত গোসল সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা । গোসল ইসলামের অন্যতম একটি ইবাদত।

ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া

ফরজ গোসলের শুরুতেই নিয়ত করে নিবেন। ফরজ গোসলের নিয়ত:
***নাওয়াইতুল গুসলা লিরাফাইল জানাবাতি ।*****
অর্থ : আমি নাপাকি হতে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি ।
এরপর গোসলের যে ফরজ রয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে শেষ করতে হবে। গোসলের ফরজ ০৩ টি। যথা-
  1. গড়গড়ার সাথে কুলি করা, রোজাদার হলে গড়গড়া করবেন না,
  2. নাকের মধ্যে পানি প্রবেশ করিয়ে উত্তমরূপে ধৌত করা,
  3. সর্বশরীরে পানি প্রবাহিত করা।
পরবর্তীতে সমস্ত শরীর সঠিকভাবে পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে। মনে রাখতে হবে একটি পশমও যেন শুকনো না থাকে। যদি শরীরের কোন পশম বা কোন স্থান শুকনো থাকে তাহলে গোসল আদায় হবে না। তাই ফরজ গোসল আদায়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই সমগ্র শরীর খুবই ভালো হবে পরিষ্কার করতে হবে।

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ

০৭ টি কারণে গোসল ফরজ হয়। যথা- 
  1. স্বামী-স্ত্রীর মিলন হলে । স্ত্রী লিঙ্গের ভিতরে পুরুষাঙ্গের মাথা প্রবেশ করলেই স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ওপর গোসল করা ফরজ, বীর্য বের হোক বা না।
  2. স্বপ্নের ভিতরে বীর্য বের হলে। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের একই হুকুম।
  3. বীর্যপাত হওয়া, যখন বীর্য সহবাস ব্যতিরেকে উত্তেজনার কারণে স্বস্থান থেকে পৃথক হয়
  4. হস্তমৈথুন বা পুংমৈথুন ইত্যাদি যে কোনো উপায়ে কামোত্তেজনার সাথে বীর্য বের হলে ।
  5. ঘুমের পূর্বে পুরুষাঙ্গ দণ্ডায়মান ছিল না কিন্তু নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর তরল পানি প্রত্যক্ষ করলে,
  6. হায়েযের কারণে 
  7. নেফাসের কারণে ।

কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয়

স্ত্রী লিঙ্গের ভিতরে পুরুষাঙ্গের মাথা প্রবেশ করলেই, বীর্য বের হোক বা না হোক স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ওপর গোসল করা ফরজ। অর্থাৎ গোসল ফরজ হওয়ার জন্য বীর্য বের হওয়া কোনো শর্ত নয়। শারীরিক মিলন সংঘঠিত হলেই গোসল ফরজ , বীর্য বের হোক বা না হোক। ফরজ গোসল নিয়ম মেনে অবশ্যই আদায় করতে হবে , নিয়ম মেনে আদায় না করলে ফরজ গোসল আদায় হবে না।

বিভিন্ন প্রকার গোসলের বর্ণনা

গোসল ০৪ প্রকার । যথা -
  1. ফরজ গোসল, 
  2. ওয়াজিব গোসল, 
  3. সুন্নত গোসল ও 
  4. মোস্তাহাব গোসল ।
নিম্নে প্রত্যেক প্রকারের আলোচনা করা হলো-

ফরয গোসল

০৭ টি কারণে গোসল ফরজ হয়। যথা- 
  1. স্বামী-স্ত্রীর মিলন হলে । স্ত্রী লিঙ্গের ভিতরে পুরুষাঙ্গের মাথা প্রবেশ করলেই স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ওপর গোসল করা ফরজ, বীর্য বের হোক বা না।
  2. স্বপ্নের ভিতরে বীর্য বের হলে। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের একই হুকুম।
  3. বীর্যপাত হওয়া, যখন বীর্য সহবাস ব্যতিরেকে উত্তেজনার কারণে স্বস্থান থেকে পৃথক হয়
  4. হস্তমৈথুন বা পুংমৈথুন ইত্যাদি যে কোনো উপায়ে কামোত্তেজনার সাথে বীর্য বের হলে ।
  5. ঘুমের পূর্বে পুরুষাঙ্গ দণ্ডায়মান ছিল না কিন্তু নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর তরল পানি প্রত্যক্ষ করলে,
  6. হায়েযের কারণ।
  7. নেফাসের কারণে ।

ওয়াজিব গোসল 

০৩ টি কারণে গোসল ওয়াজিব হয় । এগুলো হলো- 
  1. কোনো কাফির ব্যক্তি স্ত্রী-সঙ্গমজনিত নাপাকি অবস্থায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তার জন্য গোসল করা ওয়াজিব। 
  2.  মুসলমান মৃত ব্যক্তির লাশকে গোসল করানো অন্যান্য মুসলমানের ওপর ওয়াজিব। 
  3. ১৫ বছর বয়স হবার পূর্বে কোনো বালক অথবা বালিকার মধ্যে বালেগ হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলে তার ওপর গোসল করা ওয়াজিব ।

সুন্নত গোসল 

০৪ টি কারণে গোসল সুন্নত । এগুলো হলো- 
  1. জুমার নামাজ পড়ার জন্য শুক্রবার গোসল করা সুন্নত। 
  2. দুই ঈদের দিনে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য গোসল করা সুন্নত । 
  3. হজ এবং উমরার ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা সুন্নত। 
  4. আরাফার ময়দানে হজের জন্য অবস্থানের পূর্বে গোসল করা সুন্নত।

 মোস্তাহাব গোসল 

নিম্নোক্ত কারণে গোসল করা মোস্তাহাবঃ
  • শবে-বরাতশবে-কদরে গোসল করা। 
  • মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পরে ঐ ব্যক্তির গোসল করা।
  • কোনো কাফির ব্যক্তি মুসলমান হলে গোসল করা। 
  • কা'বা শরীফ তওয়াফ করার জন্য গোসল করা। 
  •  ১০ ই জিলহজ মুযদালিফায় অবস্থানের জন্য গোসল করা।
  •  জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য গোসল করা।
  •  মদীনা শরীফে প্রবেশ করার জন্য গোসল করা।
  •  হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জেয়ারত করার জন্য গোসল করা।
  •  কুসুফ ও খুসুফ নামাজের জন্য গোসল করা।
  •  ইস্তেস্কার নামাজের জন্য গোসল করা।
  •  বিপদমুক্তি ও হাজত পূরণের নামাজ পড়ার জন্য গোসল করা।
  • আল্লাহ তা'আলার দরবারে খাস তওবা করার জন্য গোসল করা।
  • মুসাফিরী হতে গৃহে ফেরার পরে গোসল করা।

গোসলের ফরজ, সুন্নত ও মোস্তাহাব সমূহ

ফরজ গোসলের নিয়ম সমূহ

গোসলের ফরজ তিনটি। যথা-
  1. গড়গড়ার সাথে কুলি করা, রোজাদার হলে গড়গড়া করবেন না,
  2. নাকের মধ্যে পানি প্রবেশ করিয়ে উত্তমরূপে ধৌত করা,
  3. সর্বশরীরে পানি প্রবাহিত করা।

গোসলের সুন্নত সমূহ 

গোসলের সুন্নত ০৬ টি। যথা 
  1. উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা, 
  2.  শরীরের নাপাকি প্রথমে ধুয়ে ফেলা, 
  3.  গুপ্তস্থান ধৌত করে নাপাকি পরিষ্কার করা, 
  4. গোসলের আগে অজু করা, 
  5. মাথা ও শরীর তিন বার ধৌত করা, 
  6. গোসলের স্থান হতে অন্যত্র সরে গিয়ে পা ধৌত করা।

গোসলের মোস্তাহাব সমূহ 

 গোসলের ভিতরে মোস্তাহাব কাজ ০৭ টি। যথা
  1. মনে মনে নিয়ত করা, 
  2.  উভয় হাত ধৌত করার সময় 'বিসমিল্লাহ' বলা, 
  3.  সর্বশরীর উত্তমরূপে মেজে-ঘষে গোসল করা, 
  4.  নির্জন স্থানে গোসল করা, 
  5. গোসল করার সময় অযথা কথা না বলা, 
  6.  প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার না করা, 
  7.  গোসলের পরে গামছা অথবা তোয়ালে দ্বারা সর্বশরীর মুছে ফেলা । 

ফরজ গোসলের নিয়ম : গোসল করার সঠিক পদ্ধতি

প্রথমে গোসলের নিয়ত করে 'বিসিমল্লাহ' বলে উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবেন। এরপর গুপ্তাঙ্গ ধৌত করবে। তারপর অজু করবেন, অজুতে গড়গড়ার সাথে কুলি করবেন। রোজাদার হলে শুধু কুলি করবেন, গড়গড়া করবে না। তিনবার কুলি করা সুন্নত। 
তারপর তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করবেন। অজুতে ঘাড় মাসাহ পর্যন্ত সম্পন্ন করে সর্বশরীরে প্রথমে মাথায়, তারপর ডান কাঁধে, পরে বাম কাঁধে, এমনিভাবে পানি ঢেলে দেবেন যাতে সর্বশরীর ও পায়ের নিচ পর্যন্ত ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যায়, শরীরের কোনো অংশ যেন বাদ না যায় ।

ফরজ গোসলের নিয়ম : কতিপয় মাসআলা

  • স্ত্রীর সাথে একবার সহবাস করে অথবা একাধিক স্ত্রীদের সাথে সহবাস করে একবার মাত্র গোসল করলেই হবে। প্রত্যেক স্ত্রীর সাথে সহবাস করে আলাদা আলাদা গোসল করা ফরজ নয় । যতবার ইচ্ছা সহবাস করে একবার গোসল করলেই ফরজ গোসল আদায় হবে।
  • সহবাস করত ঘুম না গিয়ে প্রস্রাব না করে অথবা কিছু হাঁটাহাঁটি না করে গোসল করে নামাজ পড়ল এরপর সামান্য কিছু বীর্য যা সহবাসের সময় নিম্নস্থান হতে স্খলিত হয়েছিল কিন্তু বের হওয়া থামেনি। এক্ষেত্রে বের হলে আবার গোসল করতে হবে, কিন্তু ঐ নামাজ পুনঃ আদায় করতে হবে না। 
  • যদি সহবাসান্তে ঘুম গিয়ে থাকে ও প্রস্রাব বা হাঁটাহাঁটি করে থাকে এবং গোসল করে নামাজ আদায় করে থাকে এরপর বীর্য বের হয়, তবে গোসল বা নামাজ কোনোটাই পূর্ণ করতে হবে না। তবে যদি পুংলিঙ্গ উত্তেজিত হয়ে থাকে, তাহলে গোসল করতে হবে।
  • মহিলারা গোসল করার পরে যদি তার গুপ্তস্থান হতে বীর্য বের হয় এবং তা নিজের বীর্য ধারণা করলে গোসল করতে হবে; আর যদি স্বামীর বীর্য বলে ধারণা হয়, তাহলে গোসল করতে হবে না। শুধু অজু করলেই চলবে।
  • স্বপ্নদোষের কথা মনে নেই কিন্তু কাপড় কিংবা বিছানায় ভিজা চিহ্ন দেখা যায়, এ অবস্থায় যদি বীর্য বলে ধারণা হয়, তাহলে গোসল করতে হবে। আর যদি বীর্য বলে ধারণা না হয় এবং নিদ্রা যাওয়ার সময় লিঙ্গ উত্তেজিত অবস্থায় থেকে থাকে, তবে তাকে ‘মযী’ বলে ধারণা করতে হবে, এতে গোসল করতে হবে না, নতুবা গোসল করা ফরজ।
  • স্বামী-স্ত্রী একই স্থানে নিদ্রা গেছে, নিদ্রা হতে ওঠে দেখল বিছানায় বীর্যের চিহ্ন রয়েছে কিন্তু স্বপ্নদোষের কথা কারো স্মরণ নেই, এ অবস্থায় উভয়ের গোসল করতে হবে, যেহেতু বীর্য কার তা সঠিকভাবে জানা যায় নি ।
  • গোসল করার পরে মনে হলো ভুলক্রমে কুলি করেনি বা নাকে পানি দেয়নি, এ অবস্থায় নাকে পানি অথবা কুলি করে নিলেই গোসল করা হবে, পুনঃ গোসল করতে হবে না ।
  • মহিলারা মাথার চুলের খোপা বাঁধা থাকলে এমনিভাবে পানি দেবেন যেন সমস্ত চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে, খোপা খুলে ফেলতে হবে না। চুল খোলা অবস্থায় থাকলে তখন সমস্ত চুল ভেজাতে হবে ।
  • কোনো মেয়েলোক দেখে বা আলিঙ্গন করে অথবা যৌন আবেদনমূলক বই পাঠ করে বা যৌন আবেদনমূলক ছায়াছবি দেখে কামভাব জাগ্রত হবার ফলে কিংবা সঙ্গম করার পূর্বক্ষণে পুংলিঙ্গের অগ্রভাগে যে আঠাযুক্ত পদার্থ বের হয়, তাকে ‘মযী' বলে। এতে গোসল করা ফরজ হয় না, কিন্তু অজু ভঙ্গ হয় ৷
  • কামোত্তেজনার সাথে পুংলিঙ্গ দ্বারা যে গাঢ় পদার্থ বা বীর্য বের হয়, তাকে 'মনী' বলা হয়। মনী বের হলে গোসল করা ফরজ।

ফরজ গোসলের নিয়ম । কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয় : লেখক এর মতামত

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে ফরজ গোসলের নিয়ম , গোসল ফরজ হওয়ার কারণ , গোসলের ফরজ কয়টি , কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয় , ওয়াজিব গোসল , সুন্নত গোসল, মুস্তাহাব গোসল এবং গোসল সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মাসাআলা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।

 এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। খুব দ্রুত আমরা আপনাদের প্রশ্ন এবং মতামতের উত্তর প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।।ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা