ফজরের নামাজের সময় । যোহরের নামাজ কয় রাকাত । জুমার নামাজের নিয়ত

প্রিয় পাঠক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। কিন্তু আমরা সঠিকভাবে ফজরের নামাজের সময় কিংবা যোহরের নামাজ কয় রাকাত ইত্যাদি সম্পর্কে জানিনা। যার কারণে আমাদের সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
ফজরের নামাজের সময় । যোহরের নামাজ কয় রাকাত । জুমার নামাজের নিয়ত
সে সমস্যা দূর করার জন্য আজকে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি ফজরেরর নামাজের সময় , ফজরের নামাজ কয় রাকাত , ফজরের নামাজের নিয়ত , যোহরের নামাজের সময় , যোহরের নামাজ কয় রাকাত, যোহরের নামাজের নিয়ত , জুমার নামাজের নিয়ত , জুমার নামাজ কত রাকাত ইত্যাদি নিয়ে।

ফজরের নামাজের সময় । যোহরের নামাজ কয় রাকাত । জুমার নামাজের নিয়ত

ফজরের নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলিমের দিন শুরু হয়। তাই আমাদের ফজরের নামাজের সময় জানা জরুরি। চলুন জেনে নেই-

ফজরের নামাজের সময়

সুবহে সাদেকের উদয় থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত, অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পূর্বে চতুর্দিক ফর্সা হলে ফজরের নামাজ আরম্ভ করতে হয়। কিন্তু এমন সময় আরম্ভ করতে হবে যে, অজু নষ্ট হলে পুনরায় অজু করে নামাজ পড়ার সময় থাকে। 
ফজরের নামাজে চল্লিশ আয়াত পর্যন্ত কেরাত পড়তে পারে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- আসফির বিলফারি ফাইন্নাহু আ'যামুল্লি আজরি ।অর্থ : ফজরের নামাজ চতুর্দিক আলোকিত হলে আদায় করলে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়।

ফজরের নামাজ কয় রাকাত

ফজরের নামাজ মোট চার রাকাত । এগুলো হলঃ
  1. ২ রাকাত সুন্নত এবং
  2. ২ রাকাত ফরজ ।

ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ এর নিয়ত 

নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই সালাতিল ফাজরি সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি একমাত্র আল্লাহ তা'আলার (সন্তুষ্টির) নিমিত্তেই কেবলামুখি হয়ে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার ।

ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ এর নিয়ত

নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক’আতাই সালাতিল ফাজরি ফারদ্বিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি একমাত্র আল্লাহ তা'আলার (সন্তুষ্টির) জন্য কেবলামুখি হয়ে ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম, আল্লাহ আকবার।

যোহরের নামাজের সময়

সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পর থেকে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার মূল ছায়া ব্যতীত দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত বাকি থাকে । তবে গ্রীষ্মকালে যোহরের নামাজ বিলম্ব করে আদায় করলে বেশি ছওয়াব পাওয়া যায়। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে : ইযাশতাদ্দাল্ হারু ফাআদি বিস সলাত্।অর্থ : গ্রীষ্মকালে যোহরের নামাজ দেরি করে পড়বে, যেন রৌদ্রের তাপ কিছুটা কম হয় ।

যোহরের নামাজ কয় রাকাত

যোহরের নামাজ মোট বারো রাকাত। এগুলো হলঃ
  1. সুন্নত ৪ রাকাত
  2. ফরজ 8 রাকাত
  3. সুন্নত ২ রাকাত
  4. নফল ২ রাকাত ।

যোহরের ০৪ রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত

নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা আরবা'আ রাকাআতি সালাতিয যুহরি সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি একমাত্র আল্লাহ তা'আলার উদ্দেশ্যে কেবলামুখি হয়ে যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার ।

যোহরের ০৪ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত

নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা আরবা'আ রাকা'আতি সালাতিয যুহরি ফারদ্বিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি একমাত্র আল্লাহ তা'আলার জন্য কেবলামুখি হয়ে যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার ।

যোহরের ০২ রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত

নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই সালাতিয যুহরি সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি একমাত্র আল্লাহর জন্য কেবলামুখি হয়ে যোহরের দু'রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার ।

যোহরের ০২ রাকাত নফল নামাজের নিয়ত

নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই সালাতিন্ নাফলি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি একমাত্র আল্লাহর জন্য কেবলামুখি হয়ে দু'রাকাত নফল নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার ।

জুমার নামাজের সময়

যোহর এর নামাজ এবং জুমার নামাজের সময় একই। শুক্রবারের দিন যোহরের নামাজ এর পরিবর্তে
জুমার নামাজ পড়া হয়। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পর থেকে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার মূল ছায়া ব্যতীত দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জুমার নামাজের ওয়াক্ত বাকি থাকে ।

জুমার নামাজ কত রাকাত

জুমার নামাজ মোট ১৮ রাকাত। এগুলো হলঃ
  1. ০২ রাকাত অহিয়্যাতুল অজু নামাজ
  2. ০২ রাকাত দুখুলিল মাসজিদ নামাজ
  3. ০৪ রাকাত কাবলাল জুমার নামাজ
  4. ০২ রাকাত জুমার ফরজ নামাজ
  5. ০৪ রাকাত বা'দাল জুমা নামাজ
  6. ০২ রাকাত ওয়াজিয়া সুন্নত নামাজ
  7. ০২ রাকাত নফল নামাজ

জুমার নামাজের নিয়ত

জুমার ০২ রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু নামাজের নিয়ত 

নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকআতাই সালাতিত তাহিয়্যাতুল ওদূয়ি সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

জুমার ০২ রাকাত দুখুলুল মাসজিদ নামাজের নিয়ত 

নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই সালাতিদ্ দুখুলুল মাসজিদি সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

জুমার ০৪ রাকাত কাবলাল জুমা নামাজের নিয়ত 

নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা আরবা'আ রাকা'আতি সালাতি কাবলাল জুমু'আতি সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

জুমার ০২ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত 

নাওয়াইতু আন্ উসক্কিতা আন যিম্মাতী ফারদ্বায্ যুহরি বিআদাই রাক আতাই সালাতিল জুমু'আতি ফারদ্বিল্লাহি তা'আলা ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

জুমার ০৪ রাকাত বা'দাল জুমা নামাজের নিয়ত 

নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা আরবা আ রাকা আতি সালাতি বা'দাল জুমু'আতি সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

জুমার ০২ রাকাত ওয়াজিয়া সুন্নত নামাজের নিয়ত

নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক আতাই সালাতিল ওয়াক্তি সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

জুমার ০২ রাকাত নফল নামাজের নিয়ত

নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক আতাই সালাতিন নাফলি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

জুমার নামাজের খুতবা

জুমার নামাজে খুতবা পাঠ করা ফরজ এবং তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা ওয়াজিব। মনে রাখতে হবে খুতবা ছাড়া জুমার নামাজ আদায় হবে না। ইমাম সাহেব যে সময় খুতবা পড়তে দাড়াবেন তখন থেকে শেষ পর্যন্ত নামাজ পড়া, কথাবার্তা বলা মাকরূহ। 
তবে ঐ সময় যদি কারো ফজর কাজা অবস্থায় থাকে তখন ঐ কাজা নামাজ আদায় করতে পারবে। তা ছাড়া এ সময়ের মধ্যে কোনো ধরনের পানাহার করা, মাসআলা বলা, তাসবীহ্ পাঠ করা, সালাম বিনিময় করা, হাঁটাচলা করা হারাম।

জুমার দিনের ফজিলত ও গুরুত্ব

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ ইযা নদিয়া লিস্সালাতি মিই ইয়াওমিল জুমু'আতি ফাস'আও ইলা যিবিল্লাহি ওয়া যারুল বাইয়া ; যালিকুম খাইরুল্লাকুম ইন কুন্তুম তা'লামূন।
অর্থঃ হে মু'মিনগণ যখন জুমার দিন নামাজের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করে নামাজের জন্য ছুটে যাও। তা তোমাদের জন্য উত্তম। যদি তোমাদের জ্ঞানশক্তি থাকে।”
নবী (সা.) বলেন, সপ্তাহের দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনেই হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এদিনেই তাঁকে জান্নাতে দাখিল করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। যার ফলে এ পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বের সূচনা হয়েছে। এটা অনেক বড় নিয়ামত। কিয়ামতও এ দিনেই সংঘটিত হবে। ----মুসলিম শরীফ
নবী (সা.) বলেন, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, তখন কোনো মুসলমান যদি আল্লাহ তা'আলার নিকট দোয়া করে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তা কবুল করেন। ------বুখারী ও মুসলিম

ফজরের নামাজের সময় । যোহরের নামাজ কয় রাকাত । জুমার নামাজের নিয়ত : লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা ফজরেরর নামাজের সময় , ফজরের নামাজ কয় রাকাত , ফজরের নামাজের নিয়ত , যোহরের নামাজের সময় , যোহরের নামাজ কয় রাকাত, যোহরের নামাজের নিয়ত , জুমার নামাজের নিয়ত , জুমার নামাজ কত রাকাত ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।

এ সংক্রান্ত আপনাদের যে কোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। খুব দ্রুত আমরা আপনাদের প্রশ্ন এবং মতামতের উত্তর প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।।ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা