শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে - শবে বরাত নামাজের নিয়ম - শবে বরাতের ফজিলত

প্রিয় পাঠক আপনারা অনেকেই আমাদের কাছে শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে , শবে বরাত নামাজের নিয়ম এবং শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তাই আমরা আজকে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে , শবে বরাত নামাজের নিয়ম ও শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে।
শবে বরাত ২০২৪ - শবে বরাত নামাজের নিয়ম - শবে বরাতের ফজিলত
আমাদের আজকের আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে, শবে বরাতের ফজিলত , শবে বরাত নামাজের নিয়ত , শবে বরাত নামাজ কত রাকাত , শবে বরাত নামাজের নিয়ম , শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস এবং শবে বরাত কি বিদআত ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে - শবে বরাত নামাজের নিয়ম - শবে বরাতের ফজিলত

শবে বরাত ২০২৪

আরবি ক্যালেন্ডারের পবিত্র শাবান মাসের ১৫ তারিখ সাধারণত শবে বরাত হিসেবে পালিত হয়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কে কিছুটা বিতর্ক থাকলেও উপমহাদেশের মুসলমানরা ব্যাপক ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের মাধ্যমেই প্রতি বছর শবে বরাত পালন করে থাকেন।

সে ধারাবাহিকতায় শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে এর তারিখ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের চাঁদ দেখা কমিটি। গত রবিবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সন্ধ্যার পর জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাকক্ষে চাঁদ দেখার পর এই তারিখ ঘোষণা করা হয়।

শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের সভায় চাঁদ দেখার পর বাংলাদেশের জন্য পবিত্র শবে বরাত এর তারিখ ঘোষণা করা হয় আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রোজ রবিবার। এবং ২৬ শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রোজ সোমবার বাংলাদেশ সরকারের নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি থাকবে।
পবিত্র শবে বরাতের ১৫ দিন পর মুসলিম জাতির ১ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসবে পবিত্র রমজান মাস। সেই হিসেবে অনুযায়ী ২০২৪ সালের পবিত্র রমজানের প্রথম রোজা শুরু হবে ১১ মার্চ অথবা ১২ মার্চ ২০২৪।

শবে বরাতের ফজিলত

বারাআত থেকে বরাত। বারাআত অর্থ মুক্তি। আল্লাহতায়ালা এ রাতে ইমানদার বান্দাদের গুনাহ থেকে মুক্ত করেন। এ ছাড়া এ রাতকে দুআর রাত, ভাগ্য রজনী, বরকতময় রাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত, ইত্যাদি নামে ভূষিত করা হয়েছে।
নাসায়ি ও শোয়াবুল ঈমান গ্রন্থে একটি হাদিসে পাওয়া যায় : হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বর্ণনা করেন, আমি একদিন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে আরজ করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনাকে শাবান মাস ব্যতীত অন্যকোনো মাসে এতো অধিক পরিমাণে রোজা রাখতে দেখিনি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটা ওই মাস যে মাস সম্পর্কে অধিকাংশ লোকই গাফেল থাকে। এটা রজব ও রমজান মাসের মধ্যবর্তী মাস। এটা এমন মাস, যে মাসে মানুষের আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আমার আকাঙ্ক্ষা যে, আমার আমল আল্লাহর দরবারে এ অবস্থায় পেশ হোক যে, আমি রোজাদার।

শোয়াবুল ঈমান গ্রন্থে আরেকটি হাদিসে পাওয়া যায়:
হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়শা! তোমার কি আশঙ্কা হয়েছে ? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।
রাসুল (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত ? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।

শবে বরাত কি বিদআত

শবে বরাত কি বিদআত ? এই নিয়ে আলেম-ওলামা এবং ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে একথা সুস্পষ্ট যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে শবে বরাত কেন্দ্রিক আমল সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু সালাম সাবান মাসে ইবাদতের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন কিন্তু সেটি যে শবে বরাত কেন্দ্রিক সে সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। তবে হ্যা, শবে বরাত কেন্দ্রিক হালুয়া রুটি তৈরি, বিভিন্ন মিলাদ মাহফিল, তবারক বিতরণ এগুলোই স্পষ্ট বিদআত। কোরআন কিংবা হাদিসে শবে বরাত এর আমল সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, শাবানের ১৪ তারিখ রাতের ফজিলত রয়েছে। পূর্ববর্তী মুসলিম মনীষীদের অনেকেই এ রাতে সালাত পড়তেন। তবে সম্মিলিতভাবে মসজিদে সে রাত জেগে থাকা বিদআত; এমনকি দলবদ্ধভাবে জামাতে সালাত আদায় করাও বিদআত। 

এখানে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ , রাসূল (সা.) শাবান মাসে পবিত্র মাহে রমজান ব্যতীত অন্যান্য মাসের তুলনায় তুলনামূলক বেশি এবাদত করতেন তাই এই মাসের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সেজন্য শবে বরাত কি বিদআত ? এই বিতর্কে না গিয়ে শাবান মাসে যত বেশি সম্ভব নফল ইবাদত করা, নফল নামাজ পড়া, নফল রোজা করা, বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা, তাসবিহ তাহলিল ইত্যাদিতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
তাই আসুন শবে বরাত কি বিদআত ? এর বিতর্কে না গিয়ে আমরা শাবান মাসকে কেন্দ্র করে বেশি বেশি নফল ইবাদত, তাসবিহ তাহলিল ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকি।

শবে বরাত নামাজের নিয়ত

প্রিয় পাঠক শবে বরাত নামাজের নিয়ত কোন নির্দিষ্ট নয়। মনে রাখতে হবে শবে বরাতের নামাজ নফল। তাই আপনি যদি শবে বরাতের নফল নামাজ পড়ার ইচ্ছা পোষণ করেন তাহলেই আপনার নিয়ত হয়ে যাবে। নির্দিষ্ট কোন শবে বরাত নামাজের নিয়ত নেই। অন্যান্য নামাজের মতই আপনি শবে বরাত নামাজের নিয়ত করতে পারেন।

শবে বরাত নামাজের নিয়ত (আরবি)
নাওয়াইতুআন উসল্লি লিল্লা-হি তাআ-লা রাকআতাই সালা-তিল লাইলাতিল বারা-তিন-নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
শবে বরাত নামাজের নিয়ত (বাংলা)
আমি শবে বরাত এর দুই রাকাত নফল নামাজ কিবলামুখী হয়ে পড়ছি, আল্লাহু আকবর’।

শবে বরাত নামাজ কত রাকাত

শবে বরাত এর নামাজ নফল হওয়ায় আপনি যত রাকাত পড়বেন সেটাই আপনার জন্য যথেষ্ট। দুই রাকাত করে করে আপনি ৪ রাকাত, ৮ রাকাত, ১২ রাকাত, ১৪ রাকাত , ২০ রাকাত নামাজও পড়তে পারেন।
নফল ইবাদত মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাই আল্লাহকে খুশি করার জন্য আপনার পক্ষে যতটুকু সম্ভব আপনি ততটুকুই আদায় করবেন। শবে বরাত নামাজ কত রাকাত ৪ রাকাত নাকি ৮ রাকাত নাকি ১২ রাকাত নাকি ২০ রাকাত তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন মতামত নেই।

শবে বরাত নামাজের নিয়ম

শবে বরাত নামাজের নিয়ম নির্দিষ্ট নয়। অন্যান্য নামাজ আপনি যেভাবে আদায় করেন শবে বরাতের নফল নামাজও আপনাকে ঠিক একইভাবে আদায় করতে হবে। অর্থাৎ অন্যান্য নামাজে যেগুলো ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব সেগুলোই শবে বরাত নামাজের নিয়ম অনুযায়ী ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব।

শবে বরাত এর রাতে যেহেতু দীর্ঘ সময় পাওয়া যায়, তাই আমরা সালাতুত তাসবিহ পড়তে পারি। এই নামাজ জীবনে একবার হলেও পড়ার তাগিদ রয়েছে।আবু দাউদ শরিফ এবং ইবনে মাজাহ শরীফের হাদিসে বর্ণনা অনুযায়ী-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার চাচা আব্বাস (রা.)-কে বলেছেন, হে চাচা! আপনি চার রাকাত নামাজ পড়বেন। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহা ও অন্য একটি সুরা পড়বেন। প্রথম রাকাতে যখন কেরাত পড়া শেষ করবেন তখন দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন- সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
এরপর রুকুতে যাবেন এবং রুকু অবস্থায় দোয়াটি ১০ বার পড়বেন। এরপর রুকু থেকে মাথা উঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদায় যাবেন। সিজদা অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন এরপর ১০ বার পড়বেন। 

এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং সিজদা অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এ হলো প্রতি রাকাতে ৭৫ বার। আপনি চার রাকাতেই অনুরূপ করবেন।
যদি আপনি প্রতিদিন আমল করতে পারেন, তবে তা করুন। 

আর যদি না পারেন, তবে প্রতি জুমাবারে একবার। যদি প্রতি জুমাবারে না করেন, তবে প্রতি মাসে একবার। আর যদি তা-ও না পারেন, তবে জীবনে একবার।যখন দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহুদ পড়ার জন্য বসবেন তখন আগে ওই তাসবিহ ১০ বার পড়বেন, তারপর তাশাহুদ পড়বেন। 
তাশাহুদের পর তাসবিহ পড়বেন না। তারপর আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠবেন। এরপর তৃতীয় রাকাত ও চতুর্থ রাকাতে ও উক্ত নিয়মে তাসবিহ পাঠ করবেন।

শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস

  • রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে।
  • নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাত ইবাদত–বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব। আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। 
  • ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন আছে, যে রাতের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৪ তারিখ রাত, দুই ঈদের রাত। 
  • রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। 
  • মুআজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে, অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তাঁর সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
তথ্যসূত্র:

শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে - শবে বরাত নামাজের নিয়ম - শবে বরাতের ফজিলত: লেখক এর মতামত

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে, শবে বরাতের ফজিলত , শবে বরাত নামাজের নিয়ত , শবে বরাত নামাজ কত রাকাত , শবে বরাত নামাজের নিয়ম , শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস এবং শবে বরাত কি বিদআত ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করব আপনি পবিত্র শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে সংক্রান্ত আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।

এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং গুগল নিউজে আমাদের পেজটিতে ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা