পেশাব পায়খানার দুআ, নিয়ম ও ইস্তিনজার বর্ণনা

পেশাব পায়খানার দুআ, নিয়ম ও ইস্তিনজার বর্ণনা জানা আমাদের সকলের জন্যেই প্রয়োজন। পাক পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। পবিত্রতা ছাড়া কোন ইবাদত কবুল হবে না। যে সব সময় পাক-পবিত্র থাকে আল্লাহ তাকে ভালবাসেন।
পেশাব পায়খানার দুআ, নিয়ম ও ইস্তিনজার বর্ণনা
চলুন আজকে আমরা পেশাব পায়খানার দুআ, নিয়ম ও ইস্তিনজার বর্ণনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

পেশাব পায়খানার দুআ নিয়ম ও ইস্তিনজার বর্ণনা

পেশাব পায়খানার দুআ, নিয়ম

পেশাব পায়খানায় প্রবেশের পূর্বে প্রথমে বাম পা দিয়ে এই দোয়া পড়বেন-
বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নী আ'উযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবা-ইছ।
অর্থ : হে আল্লাহ্! পিশাচ ও পিশাচীর পৈশাচিকতা হতে আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

পেশাব পায়খানা করার সময় হাঁটুর ওপরে কাপড় খুলে বসা উচিত নয় । আর লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে পেশাব করার সময় তার ছিটা যেন কাপড়ে কিংবা শরীরে না লাগে।
পেশাব পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় ডান পা প্রথমে দিয়ে এই দোয়া পড়বে –
গুফরানাকাল হামদু লিল্লাহিল্লাযী আযহাবা 'আনিল আযা ওয়া আফানী।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি । সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার ভিতর থেকে কষ্টদায়ক অপবিত্র জিনিস বের করে আমাকে সুখ-শান্তি দান করেছেন।

ইস্তিনজার বর্ণনা

ইস্তিনজা আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- পবিত্রতা হাসিল করা। শরিয়তের পরিভাষায়, পেশাব পায়খানার পরে ঢিলা-কুলুখ ও পানির মাধ্যমে পবিত্রতা হাসিল করাকে ইস্তিনজা বলা হয়। ঠিকমত ইস্তিনজা না করলে অজু, গোসল, নামাজ সবই বরবাদ হয়ে যাবে, কোনো কাজে আসবে না।

অতএব পেশাব-পায়খানার পরে উত্তমরূপে ইস্তিনজা করবেন। ইসলাম ধর্ম প্রত্যেক কাজের আদব-কায়দা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছে । সভ্যতা, ভদ্রতা, শালীনতার শিক্ষা ইসলামই বিশ্ববাসীকে শিক্ষা দিয়েছে। অতএব মুসলমানের প্রত্যেক কাজেই আদব-তমিজের পরিচয় থাকা উচিত।
ইস্তিনজা দু' প্রকার। যথা-
১. ছোট ইস্তিনজা এবং
২.বড় ইস্তিনজা ।
পেশাব-পায়খানা করার পর পবিত্রতা হাসিল করাকে ছোট ইস্তিনজা এবং মলত্যাগের পর পবিত্রতা হাসিল করাকে বড় ইস্তিনজা বলা হয় ।

পেশাব পায়খানার দুআ, নিয়ম ও ইস্তিনজার বর্ণনা : ঢিলা কুলুখের বর্ণনা

পেশাব পায়খানার পর পুরুষ লোকদের জন্য ঢিলা-কুলুখ নেয়া একান্ত প্রয়োজন । পুরুষ লোকদের প্রস্রাবের নালী এমনিভাবে তৈরি যে, একবারেই সম্পূর্ণ প্রস্রাব বের হয় না। মূত্রথলি হতে প্রস্রাব প্যাঁচে প্যাঁচে গড়িয়ে বের হতে কিছু সময়ের দরকার । এহেন অবস্থায় প্রস্রাব বের হওয়ার প্রাথমিক জোর প্রবাহ কমে গেলে তারপরও ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব বের হতে থাকে।

জোর প্রবাহ থামা মাত্র পানি দ্বারা ধৌত করত ওঠে গেলে আরও ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব বের হয়ে কাপড়-চোপড়ে লাগতে পারে । অতএব প্রস্রাবের জোর প্রবাহ থেমে গেলে ঢিলা-কুলুখ নিয়ে কিছু সময় পায়চারি করলে, গলা খাকার দিলে এবং তলপেটে একটু ঝাঁকানি দিলে প্রস্রাবের ফোঁটা নিঃশেষে বের হয়ে আসে। এরপর পানি দ্বারা ধৌত করলে কোনো ভয় থাকে না।
ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সুন্নত। এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনেক, যেহেতু ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার না করলে কাপড়-চোপড় ও শরীর নাপাক থাকার সম্ভাবনা থাকে আর এতে অজু ও নামাজ বাতিল হয়ে যায় । তিনটি কুলুখ নেয়া সুন্নত । 

সাধারণত তিনটি কুলুখ দ্বারাই পায়খানার স্থল পরিষ্কার হয়ে থাকে। শীত-মৌসুমে পুরুষ লোকেরা প্রথম কুলুখ পিছন হতে সম্মুখের দিকে, দ্বিতীয় কুলুখ সম্মুখ হতে পিছনের দিকে, আর তৃতীয় কুলুখ পিছন হতে সম্মুখের দিকে টানবেন।
গরমের মৌসুমে এর উল্টা। মেয়েলোক উভয় মৌসুমে প্রথম ও তৃতীয় কুলুখ সম্মুখের দিক হতে পিছনের দিকে টানবেন আর দ্বিতীয় কুলুখ পিছনের দিক হতে সম্মুখের দিকে টানবেন । কুলুখ নেয়ার পরে পানি দ্বারা ধৌত করা অতি উত্তম ।

পেশাব পায়খানার সময় বর্জনীয় কার্যাবলী

  1. পেশাব পায়খানা করার সময় কেবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে বসতে পারবেন না।
  2. পেশাব পায়খানা রত অবস্থায় সিগারেট পান করবেন না।
  3. দণ্ডায়মান অবস্থায় উক্ত কাজ সেরে নেবেন না।
  4. প্রস্রাব-পায়খানায় ঢুকতে ডান পা এবং বের হতে বাম পা আগে দেবেন না ; বরং ঢুকার সময় বাম পা আগে দেবে আর বের হবার সময় ডান পা আগে দিয়ে বের হবেন।
  5. সঙ্গে করে কুরআন-হাদীসের কোনো আয়াত, কালাম অথবা আল্লাহ ও রাসূলের নাম লিখিত কোনো কাগজ নেয়া যাবে না। এমনি আংটির মধ্যেও যদি আল্লাহর নাম খচিত থাকে তবে তা খুলে রেখে পেশাব পায়খানায় ঢুকে তা সেরে নেবেন।
  6. পেশাব পায়খানা রত থাকাকালীন কথাবার্তা ও পানাহার করা যাবে না ।
  7. পেশাব পায়খানা থাকা অবস্থায় কাউকে সালাম দেয়া অথবা সালামের জওয়াব দেয়া যাবে না ।
  8. পেশাব পায়খানার সময় চারিদিকে কিংবা আকাশের দিকে অথবা বারবার লজ্জাস্থানের দিকে তাকানো যাবে না ।

পেশাব পায়খানার দুআ, নিয়ম ও ইস্তিনজার বর্ণনা : যে সমস্ত জিনিস দ্বারা ইস্তিনজা করা নিষিদ্ধ

  1. নাপাক বস্তু দ্বারা,
  2. গোবর দ্বারা,
  3. স্বর্ণ দ্বারা,
  4. রৌপ্য দ্বারা,
  5. কাঁচ দ্বারা,
  6. পাকা ইট দ্বারা,
  7. লৌহ ও তাম্র দ্বারা,
  8. মসজিদের মাটি দ্বারা,
  9. চুনা দ্বারা,
  10. হার দ্বারা,
  11. শিং দ্বারা,
  12. পশম দ্বারা,
  13. হালাল বা হারাম জন্তুর মাংস দ্বারা,
  14. শষ্য ও ফল দ্বারা,
  15. চুল, দাড়ি ও গোঁফ দ্বারা,
  16. মানুষের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা,
  17. পিতলের সাহায্যে,
  18. কাঁচা ঘাস ও কাঁচা খড়কুটা দ্বারা,
  19. লেখাপড়ার জন্য প্রস্তুতকৃত এবং ব্যবহৃত কাগজ দ্বারা,
  20. যে বস্তু দ্বারা একবার কুলুখ করা হয়েছে তা দ্বারা পুনরায় কুলুখ করা নিষিদ্ধ ।

পেশাব পায়খানার দুআ, নিয়ম ও ইস্তিনজার বর্ণনা : যে সমস্ত জিনিস দ্বারা ইস্তিনজা করা জায়েজ

  1. মাটির ঢিলা,
  2. মাটি জাতীয় কোনো বস্তু দ্বারা,
  3. পাথরের টুকরা,
  4. বালি দ্বারা,
  5. তুলা দ্বারা,
  6. শুকনা বৃক্ষপত্র দ্বারা,
  7. শুকনা ঘাস দ্বারা,
  8. কাপড়ের টুকরা দ্বারা,
  9. সুপারি বা নারিকেলের ছোবরা দ্বারা,
  10. টয়লেট পেপার দ্বারা।

পেশাব পায়খানার দুআ, নিয়ম ও ইস্তিনজার বর্ণনা : লেখকের মতামত

আজেকে আমরা পেশাব পায়খানার দুআ, নিয়ম ও ইস্তিনজার বর্ণনা জানলাম। এই নিয়মগুলো আমাদের সকলেরই জানা খুবই জরুরী।

এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং গুগল নিউজে আমাদের পেজটিতে ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা