এইডস এর লক্ষণ ও কারণ - এইডস কি ?

প্রিয় পাঠক পৃথিবীতে যতগুলো মরণব্যাধি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো এইডস । আমরা যদি এইডস কি ? এইডস এর লক্ষণ ও কারণ,  এইডস কত দিন পর ধরা পরে, এইডস হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে জানি তাহলে খুব সহজেই আমরা এই মরণব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে পারি।
এইডস এর লক্ষণ ও কারণ  । এইডস কি ?
তাই আজকে আমরা আপনাদের সামনে এইডস কি ? এইডস এর লক্ষণ ও কারণ, এইডস কত দিন পর ধরা পরে, এইডস হলে করণীয় কি ? এইডস প্রতিকারের উপায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছি। আমাদের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি এইডস সংক্রান্ত আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

এইডস এর লক্ষণ ও কারণ । এইডস কি ? এইডস কত দিন পর ধরা পরে

এইডস এর মত ঘাতকব্যাধি থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সর্বপ্রথম এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে মূলত এইডস কত দিন পর ধরা পরে তার নির্দিষ্ট কোন তথ্য না থাকায় আক্রান্ত ব্যক্তি খুব সহজেই নিজের অজান্তে এইডসের বিস্তার ঘটায়।

এইডস কি ?

এইডস এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Acquired Immuno Deficiency Syndrome সংক্ষেপে (AIDS)। যার বাংলা অর্থঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবজনিত অনুপযুক্ত হরমোন। এই রোগ মূলত HIV ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায়। HIV এর পূর্ণরূপ Human Immunodeficiency Virus অর্থাৎ, মানব দেহের রোগ প্রতিরক্ষা অভাব সৃষ্টিকারী ভাইরাস।
মূলত এইডস একটি রোগ নয়, মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব জনিত কারণে ক্যান্সারসহ নানা রোগের সমাহারই হচ্ছে এইডস । HIV ভাইরাস মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়, ফলে নানা সংক্রামক রোগ ও কয়েক রকম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে রোগী মৃত্যু মুখে ঢলে পড়ে। HIV ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। 
কমতে কমতে এইডস পর্যন্ত পৌছতে বেশ কয়েক বছর লাগে। কিন্তু শরীরে এই ভাইরাস একবার সংক্রমিত হলে তা কমানো সম্ভব হলেও সম্পূর্ণ দূর করার সুযোগ না থাকায় শেষ পর্ষন্ত আক্রান্ত ব্যক্তি এইডসে আক্রান্ত হয়।

এইডস এর লক্ষণ ও কারণ

প্রিয় পাঠক চলুন এবার আমরা জেনে নেই এইডস এর লক্ষণ ও কারণ। শুরুতেই আমরা জেনে আসি এইডস কিভাবে হয় বা এইডস রোগের কারণসমূহ।এইডস কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। সাধারণত ৫ টি কারণে এইডস হয়। এই ৫টি কারণ হলোঃ
  1. এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত সুস্থ ব্যক্তি গ্রহণ করলে।
  2. এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত সূঁচ বা সিরিঞ্জ কোনো সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করলে
  3. এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো অঙ্গ কোনো সুস্থ ব্যক্তি ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে
  4. এইডস আক্রান্ত মায়ের মাধ্যমে : গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে বা এইডস আক্রান্ত মায়ের দুধ পানকালে বাচ্চা আক্রান্ত হতে পারে।
  5. এইডস আক্রান্ত রোগীর সাথে অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক মিলন করলে ।

এইডস এর লক্ষণ

  • ক্লান্তিঃ যদি আপনি সবসময় ক্লান্তি অনুভব করেন এবং অল্প পরিশ্রমে আপনি অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে যান তাহলে আপনার এটি এইডস এর লক্ষণ হতে পারে।
  • ডায়রিয়াঃ যদি আপনি ঘন ঘন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হন তাহলে এটি আপনার জন্য এইডস এর লক্ষণ হতে পারে।
  • প্রচন্ড পেশী ব্যাথাঃ কঠিন শারীরিক কাজ না করেই আপনার পেশীতে যদি প্রচন্ড ব্যাথা এবং অস্বস্তি হয় তাহলে এটি এইডস এর লক্ষণ হতে পারে।
  • শরীরে ব্যথা এবং ফোলা ভাবঃ একটি নির্দিষ্ট বয়সে শরীরে ব্যথা এবং ফোলা ভাব স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে এটি যদি আপনার যুবক বয়সেই ঘটে তবে এইডস এর লক্ষণ হতে পারে।
  • মাথা ব্যথাঃ যাদের সব সময় দীর্ঘদিন থেকে মাথা ব্যথা থাকে এবং কোন ওষুধেই কাজ করে না তাদের জন্য এটি এইডস এর লক্ষণ হতে পারে।
  • ওজন কমে যাওয়াঃ এইডস আক্রান্ত রোগীর ওজন প্রতিদিন কিছুটা করে করে কমতে থাকে। যদি আপনি এইডস আক্রান্ত হওয়ার মতো কোনো কাজের সাথে জড়িত থাকেন এবং আপনার ওজন নিয়মিত কমতে থাকে তাহলে আজই আপনি এইডস টেস্ট করান।
  • ফুসকুড়ি হওয়াঃ আপনার শরীরের বিভিন্ন স্থানে যদি দীর্ঘদিন থেকে ফুসকুড়ি উঠে থাকে এবং তা যদি নিরাময় না হয় তাহলে তা এইডস এর লক্ষণ হতে পারে।
  • গলা শুকিয়ে যাওয়াঃ নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার পরেও যদি আপনার গলা সব সময় শুকিয়ে থাকে তবে তা এইডস এর লক্ষণ হতে পারে।
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করাঃ অকারণে দুশ্চিন্তা করা, কান্নাকাটি করতে আসেন, তবে অনেকসময় এটি এইচআইভির কারণ হিসেবে মনে করা হয়।
  • যৌনাঙ্গে ঘাঃ যদি আপনার গোপনাঙ্গে ঘা থাকে আপনি চিকিৎসা গ্রহণ করার পরেও যদি সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ না হন তাহলে এটিও আপনার এইডস এর লক্ষণ হতে পারে।
মনে রাখবেন, আমরা উপরে এইডস এর লক্ষণ ও কারণ যেগুলো আলোচনা করেছি সেগুলো যেকোনো একটি বা একাধিক লক্ষণ যদি আপনার ভিতরে থাকে এবং এইডসে আক্রান্ত হওয়ার যে পাঁচটি কারণ আমরা উল্লেখ করেছি সেরকম যদি আপনার সাথে ঘটে তাহলে অতিশীঘ্রই আপনি এইচআইভি/এইডস এর পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

এইডস কত দিন পর ধরা পরে

এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার পর এইডস রোগে রূপান্তর হতে কমবেশি প্রায় ১০ বছর সময় লেগে যায়। এ সময়টাকে এইডস এর সুপ্ত সময় বলা হয়। এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের অজান্তেই সুস্থ ব্যাক্তির মাঝে এই রোগ ছড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে সময় বাড়ার সাথে সাথে আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে এইডস এর লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং একপর্যায়ে তার ওজন খুবই দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। তখনই বুঝা যায় যে রোগী এইডস আক্রান্ত হয়েছে।
তবে এইচআইভি সংক্রমণের ২-৩ মাসের মধ্যে কিছু কিছু প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়তে শুরু করে। একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে, রোগী ভেদে এক বা একাধিক লক্ষণও দেখা দিতে পারে। এইচআইভির লক্ষণ প্রকাশের ছয় মাস পর ওয়েস্টার্ন ব্লট টেস্ট করালে জানা যাবে আপনি এইচআইভি আক্রান্ত কি না?

এইডস হলে করণীয়

এইডস রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু অনেকটা নির্ধারিত। সেজন্যই এই রোগকে মরণব্যাধি বা ঘাতক ব্যাধি বলা হয়।তবে এইচআইভির চিকিৎসার দ্বারা এইডস এ রুপান্তর আরো কিছু বছর পিছিয়ে দেওয়া যায়। HAART নামে যে সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, তা অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ।
যে সকল গর্ভবতী মায়েরা এইডস রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে জিডোভুডিন / এজিডোথাইমিডিন ওষুধ ব্যবহার করে গর্ভের সন্তানের এইডসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কমিয়ে আনা যায়। এবং তা করলে মায়ের বুকের দুধও বাচ্চাকে দেওয়া যেতে পারে।

এইডস প্রতিকারের উপায়

আমরা সকলেই জানি প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকার উত্তম। আমরা যদি অল্প কয়েকটি বিষয় মেনে চলি তাহলে খুব সহজে আমরা এইডস প্রতিকার করতে পারবো। চলুন এবার আমরা জেনে নেই এইডস প্রতিকারের উপায় সমূহঃ
  1. জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
  2. ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা
  3. কোন যৌন রোগ থাকলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া
  4. অন্যের রক্ত গ্রহণ বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনে আগে রক্তে এইচআইভি আছে কিনা পরীক্ষা করে নেয়া
  5. ইনজেকশন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই নতুন সুচ/সিরিঞ্জ ব্যবহার করা
  6. অনিরাপদ ও অনৈতিক যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা
  7. এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের সন্তান গ্রহণ বা সন্তানকে বুকের দুধ দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া
  8. অন্যের ব্যবহার করা ব্লেড/চাকু ব্যবহার ব্যবহার না করা।

এইডস এর লক্ষণ ও কারণ । এইডস কি ? : লেখক এর মতামত

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে এইডস কি ? এইডস এর লক্ষণ ও কারণ, এইডস কত দিন পর ধরা পরে, এইডস হলে করণীয় কি? এইডস প্রতিকারের উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করি এইডস সংক্রান্ত আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়েছেন।

এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং আমাদের ফেসবুক পেজটিতে ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা

আমাদের ফেসবুক পেইজ