হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু তারিখ এবং নবীজির জীবনের শেষ দিনগুলি
প্রিয় পাঠক মৃত্যু সকল প্রাণীর জন্যই অবধারিত একটি বিষয়। সেই ধারাবাহিকতায়
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ মৃত্যু বরণ করেন। আজকে আমরা হযরত মুহাম্মদ
সাঃ এর মৃত্যু তারিখ এবং নবীজির জীবনের শেষ দিনগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ এর মৃত্যু ছিল একটি বেদনাবিধুর দিন। আমরা হযরত মুহাম্মদ সাঃ
এর মৃত্যু তারিখ এবং তিনি মারা যাওয়ার আগের কয়েকদিন সম্পর্কে আলোচনা করব।
প্রিয় নবীজির জীবনের শেষ দিনগুলো সম্পর্কে জানতে আমাদের পশ্চিম মনোযোগ সহকারে
পড়ুন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু তারিখ এবং নবীজির জীবনের শেষ দিনগুলি
বিদায় হজ্জের দিন আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত পূর্ণতা লাভ করেছে, সম্পূর্ণ আরব জাহান
ইসলামের নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে। এ সময় রসূল সাঃএর চিন্তা-চেতনা, অনুভব-অনুভূতি,
বাহ্যিক আচার-আচরণ ও কথাবার্তায় এমন সব নিদর্শন প্রকাশ পেতে লাগলো, যা থেকে
স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছিলো, তিনি এ পৃথিবী থেকে শীঘ্রই বিদায় নিবেন।
বিদায়ের লক্ষণসমূহ
- দশম হিজরীর রমযান মাসে নবী করীম সাঃ বিশ দিন এতেকাফ পালন করেন অথচ অন্যান্য রমযানে পালন করতেন দশ দিন।
- হযরত জিবরাঈল (আ.) এ বছর নবী করীম সাঃ কে সমগ্র কোরআন শরীফ দুই বার পাঠ করে শোনান।
- বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি বলেছিলেন, আমি জানি না সম্ভবত এ বছরের পর এ জায়গায় তোমাদের সাথে আমি আর কখনো মিলিত হতে পারবো কি না।
- জামরায়ে আকাবার কাছে তিনি বলেন, আমার কাছ থেকে হজ্জের নিয়মাবলী শিখে নাও। কেননা আমি এ বছরের পর সম্ভবত আর কখনো হজ্জ করতে পারবো না।
- আইয়ামে তাশরীকের মাঝামাঝি (১০, ১১, ১২ই যিলহজ্জ) সময়ে সূরা নাসর নাযিল হয়। তিনি বুঝে ফেলেছিলেন, এবার এ দুনিয়া থেকে তাঁর বিদায় নেয়ার পালা। এ সূরা নাযিল হওয়া মানে হচ্ছে তাঁর মৃত্যুর একটা আগাম সংবাদ দেয়া।
- একাদশ হিজরীর সফর মাসের শুরুতে নবী করীম সাঃ ওহুদ প্রান্তরে গমন করেন। সেখানে তিনি শহীদদের জন্যে এমনভাবে দোয়া করলেন যেন জীবিতরা মৃতদের কাছ থেকে বিদায় গ্রহণ করছে।
- ফিরে এসে তিনি মিম্বরে বসে বললেন, আমি তোমাদের কাফেলার আমীর এবং তোমাদের জন্যে সাক্ষী। আল্লাহর শপথ, এখন আমি আমার হাউয হাউযে কাওসার দেখতে পাচ্ছি। আমাকে সমগ্র বিশ্ব জাহান এবং এর ধন-ভান্ডারের চাবি প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহর শপথ, আমি এ আশংকা পোষণ করি না যে, তোমরা আমার পরে শেরেক করবে; বরং এ আশংকা করছি, তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করবে।
- একদিন মধ্য রাতে রাসূল সাঃ জান্নাতুল বাকি কবরস্তানে যান এবং সেখানে মুর্দাদের জন্যে দোয়া করেন। সে দোয়ায় তিনি বলেন, হে কবরবাসীরা, তোমাদের প্রতি সালাম। মানুষ যে অবস্থায় রয়েছে তার চেয়ে তোমরা যে অবস্থায় রয়েছো তা তোমাদের জন্যে শুভ হোক। ফেতনা আঁধার রাতের মতো একের পর এক চলে আসছে। পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের চেয়ে মন্দ। এরপর কবরবাসীদের এ সুখবর প্রদান করেন, আমিও তোমাদের সাথে এসে মিলিত হবো।
অসুস্থতার শুরু
একাদশ হিজরীর ২৯ শে সফর রোববার
নবী করীম সাঃ
জান্নাতুল বাকিতে এক জানাযায় অংশ গ্রহণ করেন। ফেরার পথে মাথা ব্যথা শুরু হয় এবং
উত্তাপ এতো বেড়ে যায় যে, মাথায় বাঁধা পট্টির ওপর দিয়েও তাপ অনুভব করা যাচ্ছিলো।
এটা ছিলো তাঁর অসুস্থতার শুরু। তিনি সে অসুস্থ অবস্থায়ই এগারো দিন নামায পড়ান।
তিনি মোট তেরো অথবা চৌদ্দ দিন অসুস্থ ছিলেন।
জীবনের শেষ সপ্তাহ
রাসূল সাঃ এর মানসপ্রকৃতি ক্রমেই ভারবহ হয়ে পড়ছিলো। এ সময় তিনি সহধর্মিণীদের
জিজ্ঞেস করতেন, আমি আগামীকাল কোথায় থাকবো? আমি আগামীকাল কোথায় থাকবো? নবী করীম
সাঃ এর জিজ্ঞাসার তাৎপর্য তাঁর সহধর্মিণীরা বুঝে ফেলেন। তাই তারা বললেন, ইয়া
রাসূলাল্লাহ সাঃ আপনি যেখানে থাকতে ইচ্ছা করেন সেখানেই থাকবেন।
এরপর তিনি হযরত আয়েশা (রা.)-এর ঘরে স্থানান্তরিত হন। স্থানান্তরের সময় তিনি হযরত
ফযল ইবনে আব্বাস এবং হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.)-এর ওপর ভর দিয়ে চলছিলেন। তাঁর
মাথায় পট্টি বাঁধা, পবিত্র চরণযুগল মাটিতে হেঁচড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি হযরত
আয়েশা (রা.)-এর ঘরে স্থানান্তরিত হন এবং জীবনের শেষ সপ্তাহ ওখানেই কাটান।
হযরত আয়েশা (রা.) রাসূল সাঃ এর কাছ থেকে শিক্ষা করা দোয়াসমূহ পাঠ করে তাঁর পবিত্র
দেহে ফুঁ দিতেন এবং বরকতের আশায় তাঁর পবিত্র হাতই দেহে ফেরাতেন।
মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে
ইনতেকালের পাঁচ দিন আগে চাহার সোম্বায় (বুধবার) নবী করীম সাঃ কিছুটা সুস্থ বোধ
করে মাসজিদে যান। এ সময় মাথায় পট্টি বাঁধা ছিলো। তিনি মিম্বরে আরোহণ করে ভাষণ
দেন। সাহাবায়ে কেরাম আশেপাশে সমবেত ছিলেন। তিনি বললেন, ইহুদী নাসারাদের ওপর
আল্লাহর লানত, কেননা তারা তাদের নবীদের কবরকে মাসজিদে পরিণত করেছে। তোমরা আমার
কবরকে মূর্তিতে পরিণত করো না।
এরপর তিনি নিজেকে অন্যদের বদলা নেয়ার জন্যে পেশ করে বললেন, আমি যদি কারো পিঠে
চাবুকের আঘাত করে থাকি, তবে এই আমার পিঠ হাযির, সে যেন বদলা নিয়ে নেয়। যদি কাউকে
অসম্মান করে থাকি তবে সে যেন আমার কাছ থেকে বদলা গ্রহণ করে।
এরপর নবী করীম সাঃ মিম্বরের ওপর থেকে নীচে নেমে আসেন এবং যোহরের নামায পড়ান। এরপর
তিনি পুনরায় মিম্বরে উপবেশন করেন। এরপর তিনি আনসারদের সম্পর্কে অসিয়ত করেন। তিনি
বললেন, আমি তোমাদের আনসারদের ব্যাপারে অসিয়ত করছি। কেননা তারা আমার অন্তর ও
কলিজা। তারা নিজেদের যিম্মাদারী পূর্ণ করেছে, কিন্তু তাদের অধিকারসমূহ বাকি রয়ে
গেছে। কাজেই তাদের মধ্যেকার নেককারদের গ্রহণ করবে এবং বদকারদের ক্ষমা করবে।
এরপর রাসূল সাঃ বললেন, বন্ধুত্ব এবং অর্থ সম্পদের ত্যাগ স্বীকারে আমার প্রতি
সবচেয়ে বেশী এহসান রয়েছে আবু বকরের। যদি আমি আমার প্রতিপালক ব্যতীত অন্য কাউকে
খলিল/বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতাম, তবে আবু বকরকে গ্রহণ করতাম, কিন্তু তার সাথে আমার
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার সম্পর্ক বিদ্যমান।
মৃত্যুর চার দিন আগে
রাসূল সাঃ এর ওফাতের চার দিন আগে বৃহস্পতিবার তিনি খুবই কষ্ট পাচ্ছিলেন। সে সময়
নবী করীম সাঃ তিন ব্যাপারে অসিয়ত করেন। প্রথমত ইহুদী, নাসারা এবং মোশরেকদের
জাযিরাতুল আরব থেকে বের করে দেবে। দ্বিতীয়ত আগন্তুক প্রতিনিধি দলের সাথে আমি যে
রকম ব্যবহার করতাম সে রকম ব্যবহার করবে। তৃতীয় কথা বর্ণনাকারী ভুলে গেছেন।
সম্ভবত নবী করীম সাঃ কোরআন সুন্নাহ দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা অথবা ওসামা বাহিনীকে প্রেরণ
করার কথা বলেছেন, অথবা তিনি বলেছিলেন, নামায এবং তোমাদের অধীনস্থ দাসদাসীদের
প্রতি খেয়াল রাখবে।
অসুখের তীব্রতা সত্ত্বেও ওফাতের চার দিন আগে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাসূল সাঃ সকল
নামাযে নিজেই ইমামত করেন। সেদিনের মাগরেবের নামাযেও তিনিই ইমামত করেছিলেন। সেই
নামাযে তিনি সূরা মুরসালাত পাঠ করেন।
এশার সময় রোগ এতো বেড়ে গেলো যাতে মাসজিদে যাওয়ার শক্তি থাকেনি। হযরত আয়েশা (রা.)
বলেন, নবী করীম সাঃ জিজ্ঞেস করলেন, লোকেরা কি নামায আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম,
না ইয়া রসূলাল্লাহ। তারা আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে। রাসূল সাঃ বললেন, আমার জন্যে
পাত্রে পানি নিয়ে আস। আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন। এরপর ওঠতে চাইলেন কিন্তু
বেহুশ হয়ে যান। জ্ঞান ফিরে এলে জিজ্ঞেস করলেন, লোকেরা কি নামায আদায় করে ফেলেছে?
তাঁকে জানানো হলো, না ইয়া রসূলাল্লাহ। তারা আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে। এরপর
দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বারও একই অবস্থা হয়। তিনি গোসল করলেন এরপর ওঠতে চাইলেন, কিন্তু
বেহুশ হয়ে গেলেন। এরপর তিনি হযরত আবু বকর (রা.)-কে খবর পাঠান, তিনি যেন নামায
পড়িয়ে দেন। এরপর তাঁর অসুস্থতার অন্য দিনগুলোতেও হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)
নামায পড়ান। তাঁর জীব দ্দশায় হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) সতেরো ওয়াক্ত নামাযে
ইমামত করেন।
হযরত আয়েশা (রা.) তিন অথবা চার বার রাসূল সাঃ এর কাছে এ মর্মে আরয করেন, ইমামতির
দায়িত্ব হযরত আবু বকর (রা.) ব্যতীত অন্য কাউকে দেয়া হোক। তিনি চাচ্ছিলেন, লোকেরা
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর ব্যাপারে মন্দ ধারণা পোষণ না করুক, কিন্তু নবী
করীম সাঃ প্রতিবারই সহধর্মিণীর আবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তোমরা সবাই ইউসুফ
(আ.)-এর সাথীদের মতো হয়ে গেছো। আবু বকরকে আদেশ দাও, তিনি যেন লোকদের নামায পড়ান।
মৃত্যুর দুই দিন আগে
শনি অথবা রোববার দিন নবী করীম সাঃ কিছুটা সুস্থ বোধ করেন। দুই জন লোকের কাঁধে ভর
দিয়ে যোহরের নামাযের জন্যে মাসজিদে যান। সে সময় হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)
সাহাবীদের নামায পড়াচ্ছিলেন। রাসূল সাঃ কে দেখে তিনি পেছনে সরে আসতে লাগলেন। তিনি
ইশারা করলেন, পেছনে সরে আসার দরকার নেই।
যাদের কাঁধে ভর দিয়ে
নবী করীম সাঃ
মাসজিদে গিয়েছিলেন তাদের বললেন, আমাকে আবু বকরের পাশে বসিয়ে দাও। এরপর তাঁকে হযরত
আবু বকরের ডান পাশে বসিয়ে দেয়া হয়। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) তখন নামাযে নবী
করীম সাঃএর একতেদা করছিলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে তাকবীর শোনাচ্ছিলেন।
মৃত্যুর একদিন আগে
ওফাতের একদিন আগে রোববার দিন নবী করীম সাঃ তাঁর সব দাস দাসীকে মুক্ত করে দেন।
তাঁর কাছে সে সময় সাত দিনার ছিলো, সেগুলো সদকা করে দেন। তাঁর অস্ত্রশস্ত্র
মুসলমানদের হেবা করে দেন। রাতের বেলা চেরাগ জ্বালানোর জন্যে হযরত আয়েশা (রা.) এক
প্রতিবেশীর কাছ থেকে তেল ধার আনেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু তারিখ
হযরত আনাস (রা.) বলেন, সেদিন ছিলো সোমবার। মুসলমানরা ফজরের নামায আদায় করছিলেন।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ইমামতির দায়িত্বে ছিলেন। হঠাৎ নবী করীম সাঃ হযরত
আয়েশা সিদ্দিকার হুজরার পর্দা সরিয়ে সাহাবীদের কাতার বাঁধা অবস্থায় নামায আদায়
করতে দেখে মৃদু হাসেন। এদিকে হযরত আবু বকর (রা.) কিছুটা পেছনে সরে গেলেন যেন
রাসূল নামাযের কাতারে শামিল হতে পারেন।
তিনি ভেবেছিলেন, তিনি হয়তো নামাযে আসতে চান। হযরত আনাস (রা.) বলেন, হঠাৎ করে নবী
করীম সাঃ কে দেখে সাহাবীরা এতো আনন্দিত হলেন, যাতে নামাযের মধ্যেই তাদের ফেতনায়
পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। তারা নামায ছেড়ে দিয়ে নবী করীম সাঃ এর শারীরিক অবস্থার
খবর নিতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি সাহাবীদের হাতে ইশারা করলেন, তারা যেন নামায
পুরো করেন। এরপর নবী সাঃ হুজরার ভেতর চলে গিয়ে পর্দা ফেলে দেন।
এরপর নবী করীম সাঃ এর ওপর অন্য কোনো নামাযের সময় আসেনি। দিনের শুরুতে চাশত
নামাযের সময় রাসূল সাঃ তাঁর প্রিয় কন্যা হযরত ফাতেমা (রা.)-কে কাছে ডেকে কানে
কানে কিছু কথা বললেন। এতে হযরত তিনি কাঁদতে লাগলেন। এরপর পুনরায় ফাতেমার কানে
কিছু কথা বললেন, এবার হযরত ফাতেমা (রা.) হাসতে লাগলেন।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, পরবর্তী সময়ে আমি হযরত ফাতেমাকে তাঁর কান্না ও
হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, প্রথম বার নবী করীম সাঃ আমাকে বললেন, এ
অসুখেই আমার মৃত্যু হবে। একথা শুনে আমি কাঁদলাম। এরপর তিনি আমাকে কানে কানে
বললেন, আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে সর্বপ্রথম তুমিই আমার অনুসারী হবে। একথা শুনে
আমি হাসলাম।নবী সাঃ হযরত ফাতেমা (রা.)-কে বিশ্বের সকল মহিলার নেত্রী হওয়ার
সুসংবাদও প্রদান করেন।
সে সময় রাসূল সাঃ এর যন্ত্রণার তীব্রতা দেখে হযরত ফাতেমা (রা.) হঠাৎ বলে ফেললেন,
হায় আমার আব্বার কষ্ট। একথা শুনে নবী করীম সাঃ বললেন, আজকের পরে তোমার আব্বার আর
কোনো কষ্ট নেই।নবী সাঃ হযরত হাসান ও হোসাইন (রা.)-কে ডেকে চুম্বন করেন এবং তাদের
ব্যাপারে কল্যাণের অসিয়ত করেন। সহধর্মিণীদের ডেকে তাদেরও ওয়ায-নসহীত করেন।
এর পর পরই তাঁর হাত ঝুঁকে পড়ে এবং তিনি মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান।এ ঘটনা
ঘটেছিলো একাদশ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার চাশতের নামাযের শেষ সময়ে। নবী করীম
সাঃ এর বয়স ছিলো তখন তেষট্টি বছর চার দিন।
চারদিকে শোকের ছায়া
হৃদয়বিদারক এ শোক সংবাদ অল্পক্ষণের মধ্যে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মদীনার জনগণের ওপর
শোকের পাহাড় ভেংগে পড়ে। চারদিকে শোকের কালো ছায়া। হযরত আনাস (রা.) বলেন, নবী করীম
সাঃ যেদিন আমাদের মাঝে আগমন করেছিলেন সেদিনের চেয়ে সমুজ্জ্বল দিন আমি আর কখনো
দেখিনি। আর যেদিন তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক এবং
অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনও আমি আর কখনো দেখিনি।
নবী করীম সাঃ এর ওফাতের পর হযরত ফাতেমা (রা.) শোকে কাতর হয়ে বললেন, হায় আব্বা,
যিনি আল্লাহর ডাকে লাব্বায়ক বলেছেন। হায় আব্বা, যাঁর ঠিকানা হচ্ছে জান্নাতুল
ফেরদাউস। হায় আব্বা, আমি জিবরাঈল (আ.)-কে আপনার ওফাতের খবর জানাচ্ছি।
দাফনের প্রস্তুতি
নবী করীম সাঃ এর কাফন দাফনের আগেই তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনয়ন প্রশ্নে সাহাবীদের
মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। সাকিফা বনী সায়েদায় মোহাজের ও আনসারদের মধ্যে বাদানুবাদ
হয়। অবশেষে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর খেলাফতের ব্যাপারে সবাই একমত হন। এ
কাজে সোমবারের বাকি দিন কেটে গিয়ে রাত এসে যায়। সবাই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পরদিন
সকাল হলো, সেদিন ছিলো মঙ্গলবার। তখনো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের
পবিত্র দেহ একখানা ডোরাকাটা ইয়েমেনী চাদরে আবৃত ছিলো। ঘরের লোকেরা ভেতর থেকে দরজা
বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
পরদিন মঙ্গলবার নবী করীম সাঃ এর শরীরের কাপড় না খুলেই তাঁকে গোসল দেয়া
হয়।গোসলদানকারী হলেন: হযরত আব্বাস, হযরত আলী, হযরত আব্বাসের দুই পুত্র ফযল এবং
কাসম, নবী করীম সাঃ এর মুক্ত করা দাস শোকরান, হযরত ওসামা ইবনে যায়দ এবং আওস ইবনে
খাওলা (রা.)। হযরত আব্বাস ও তাঁর দুই পুত্র নবী করীম সাঃ কে পাশ ফেরাচ্ছিলেন,
হযরত ওসামা ও হযরত শোকরান পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন এবং হযরত আলী (রা.) নবী করীম সাঃ
কে গোসল দিচ্ছিলেন।
গোসল শেষে নবী করীম সাঃ কে তিনখানি ইয়েমেনী সাদা চাদর দিয়ে কাফন দেয়া হয়। এতে
কোর্তা এবং পাগড়ি ছিলো না। তাকে শুধু চাদর দিয়েই জড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো।
নবী করীম সাঃ কে কোথায় দাফন করা হবে, সে সম্পর্কেও সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ
দেখা দেয়। হযরত আবু বকর (রা.) বললেন, আমি নবী করীম সাঃ কে বলতে শুনেছি, সকল নবীকে
যেখান থেকে তুলে নেয়া হয়েছে, সেখানেই দাফন করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত হওয়ার পর হযরত
আবু তালহা (রা.) সে বিছানা ওঠান, যে বিছানায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম ইন্তেকাল করেন। সে বিছানার নীচে কবর খনন করা হয়।
এরপর দশ জন দশ জন করে সাহাবী হুজরায় প্রবেশ করে পালাক্রমে জানাযার নামায আদায়
করেন। এ নামাযে কেউ ইমাম হননি। সর্বপ্রথম বনু হাশেম গোত্রের লোকেরা নামায আদায়
করেন। এরপর মোহাজের, এরপর আনসাররা, এরপর অন্যান্য পুরষ, এরপর মহিলা, সবশেষে
শিশুরা জানাযার নামায আদায় করে।
জানাযার নামায আদায়ে মঙ্গলবার পুরো দিন অতিবাহিত হয় এবং মঙ্গলবার দিবাগত বুধবার
রাত এসে যায়। এ রাতেই নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মোজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহে
ওয়া সাল্লামকে দাফন করা হয়।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) বলেন, রাসূল সাঃ কে ঠিক কখন দাফন করা হয় আমরা জানতে
পারিনি। তবে বুধবার রাতের মাঝামাঝি সময়ে কোদালের শব্দ পেয়েছিলাম।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু তারিখ এবং নবীজির জীবনের শেষ দিনগুলি : লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু তারিখ এবং নবীজির জীবনের শেষ
দিনগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।
এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট
করে জানাতে পারেন। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি
ভিজিট করুন এবং আমাদের ফেসবুক পেজটিতে ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।