মুহাম্ম্দ(সাঃ)

bangla

মহানবী সাঃ এর জন্ম ও বংশ পরিচয় - হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বংশ তালিকা

প্রিয় পাঠক আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আমরা অনেকেই হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বংশ তালিকা এবং আদম আঃ থেকে মুহাম্মদ সাঃ তালিকা সম্পর্কে জানতে চাই।
আদম আঃ থেকে মুহাম্মদ সাঃ তালিকা
তাই আজকে আমরা আপনাদের সামনে মহানবী সাঃ এর জন্ম ও বংশ পরিচয়, হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বংশ তালিকা এবং আদম আঃ থেকে মুহাম্মদ সাঃ তালিকা নিয়ে হাজির হয়েছি। এর পাশাপশি আমরা প্রিয় নবী সাঃ এর বংশের কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তি নিয়ে আলোচনা করব।

মহানবী সাঃ এর জন্ম ও বংশ পরিচয় - হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বংশ তালিকা

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধারাকে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায় । প্রথম অংশে হযরত মুহাম্মদ সাঃ থেকে আদনান পর্যন্ত, দ্বিতীয় অংশে আদনান থেকে হযরত ইবরাহীম আঃ এবং তৃতীয় অংশে ইবরাহীম আঃ থেকে আমরা হযরত আদম আঃ পর্যন্ত জানতে পারব।

মহানবী সাঃ এর জন্ম ও বংশ পরিচয় : প্রথম অংশ

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মোত্তালেব (শায়বা) ইবনে হাশেম (আমর) ইবনে আবদে মানাফ (মুগীরা) ইবনে কুসাই (যায়দ) ইবনে কেলাব ইবনে মোররা, ইবনে কাব ইবনে লুয়াই ইবনে গালেব ইবনে ফেহের (এর উপাধিই ছিলো কুরাইশ এবং তার প্রতি সম্বন্ধিত করেই কুরাইশ গোত্রকে কুরাইশ  বলা হয়,) ইবনে মালেক ইবনে নযর (কায়স) ইবনে কেনানা ইবনে খোযায়মা ইবনে মোদরেকা (আমের) ইবনে ইলিয়াস ইবনে মোদার ইবনে নাযার ইবনে মায়াদ ইবনে আদনান।

হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বংশ তালিকা : দ্বিতীয় অংশ

আদনান থেকে ওপরের দিকে- আদনান ইবনে উদ ইবনে হোমায়সা ইবনে সালামান ইবনে আওছ ইবনে বুয ইবনে কাময়াল ইবনে উবাই ইবনে আওয়াম ইবনে নাশেদ ইবনে হাজা ইবনে বালদাস ইবনে ইয়াদলাফ ইবনে তারেখ ইবনে জাহেম ইবনে নাহেশ ইবনে মাখী ইবনে আয়েয ইবনে আবকার ইবনে ওবায়দ ইবনে আদদায়া ইবনে হামদান ইবনে সুনবর ইবনে ইয়াসরেবী ইবনে ইয়াহয়ুন ইবনে ইয়ালহান ইবনে আরওয়া ইবনে ঈয ইবনে যায়শান ইবনে আয়সার ইবনে আফনাদ ইবনে আইহাম ইবনে মোকাসসের ইবনে নাহেছ ইবনে জারেহ ইবনে সুমাই ইবনে সেময়ী ইবনে আওয়া ইবনে এরাম ইবনে কাইদার ইবনে ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম (আ.)।

মহানবী সাঃ এর জন্ম ও বংশ পরিচয় : তৃতীয় অংশ

হযরত ইবরাহীম (আ.) থেকে ওপরের দিকে- ইবরাহীম ইবনে তারেখ (আযর) ইবনে নাহুব ইবনে ছারদা (সারুগ) ইবনে রাউ ইবনে ফালেখ ইবনে আবের ইবনে শালেখ ইবনে আরফাখশাদ ইবনে সাম ইবনে নূহ (আ.) ইবনে লামেক ইবনে মাতুশালাখ ইবনে আখনুখ (বলা হয়, আখনুকই হযরত ইদরিস আ.) ইবনে ইয়ারদ ইবনে মাহলায়েল ইবনে কায়নান ইবনে আনুশা ইবনে শীস ইবনে আদম (আ.)।

মহানবী সাঃ এর জন্ম ও বংশ পরিচয় : পারিবারিক পরিচয়

নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পরদাদা হাশেম, ইবনে আবদে মানাফের পরিচয়ে হাশেমী বংশোদ্ভূত হিসাবে পরিচিত। কাজেই হাশেম এবং তার পরবর্তী কয়েকজনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা জরুরী।

১. হাশেমঃ

বনু আবদে মানাফ এবং বনু আবদুদ দারের মধ্যে পদ বন্টনে সমঝোতা হয়েছিলো। এর প্রেক্ষিতে আবদে মানাফের বংশধররা হাজীদের পানি পান করানো এবং মেহমানদের আতিথেয়তার পদ লাভ করেন । হাশেম বিশিষ্ট সম্মানিত এবং সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেন। তিনিই প্রথম মক্কার হাজীদের সুরুয়া রুটি খাওয়ানোর ব্যবস্থা চালু করেন।তার প্রকৃত নাম ছিলো আমর, কিন্তু রুটি ছিঁড়ে সুরুয়ায় ভেজানোর কারণে তাকে বলা হতো হাশেম । 
অর্থ ও উচ্চারণ সহ পড়ুনঃ সূরা ইয়াসিন । সূরা আর-রহমান । সূরা হাশর । ১০ টি ছোট সূরা
হাশেম অর্থ হচ্ছে যিনি ভাঙ্গেন । হাশেমই প্রথম ব্যক্তি, যিনি কোরায়শদের গ্রীষ্ম এবং শীতে বছরে দু'বার বাণিজ্যিক সফরের ভিত্তি স্থাপন করেন। তার প্রশংসায় কবি বলেন- “তিনি সেই আমর, যিনি দুর্ভিক্ষপীড়িত দুর্বল স্বজাতিকে মক্কায় রুটি ভেঙ্গে ছিঁড়ে সুরুয়ায় ভিজিয়ে খাইয়েছিলেন এবং শীত ও গ্রীষ্মে দু'বার সফরের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন ।

২. আবদুল মোত্তালেব :

হাজীদের পানি পান করানো এবং মেহমানদারীর দায়িত্ব হাশেমের পর তার ভাই মোত্তালেব পেয়েছিলেন। তিনিও ছিলেন নিজ পরিবার ও কওমের মধ্যে অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন। তার কথা কেউ উপেক্ষা করতো না। দানশীলতার কারণে কোরায়শরা তাকে 'ফাইয়ায' উপাধি দিয়েছিলো। 

শায়বা অর্থাৎ আবদুল মোত্তালেব-এর বয়স যখন দশ বারো বছর, তখন মোত্তালেব তার খবর পান। তিনি শায়বাকে নিয়ে আসার জন্যে রওয়ানা হন। মদীনা অর্থাৎ ইয়াসরেবের কাছাকাছি পৌঁছার পর শায়বার ওপর দৃষ্টি পড়তেই তার দু'চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। তিনি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।

এরপর নিজের উটের পেছনে বসিয়ে মক্কার পথে রওয়ানা হন, কিন্তু শায়বা তার মায়ের অনুমতি না নিয়ে মক্কায় যেতে অস্বীকার করেন। মোত্তালেব শায়বার মা সালমার কাছে অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন । 
তখন মোত্তালেব বললেন, ও তো তার পিতার হুকুমত এবং আল্লাহর হারেমের দিকে যাচ্ছে। একথা বলার পর সালমা অনুমতি দেন। মোত্তালেব তাকে নিজের উটের পেছনে বসিয়ে মক্কায় নিয়ে আসেন। মক্কায় নিয়ে আসার পর লোকেরা তাকে দেখে বলাবলি করতে লাগলো, এ তো আবদুল মোত্তালেব, অর্থাৎ মোত্তালেবের দাস ।

মোত্তালেব বললেন, না, না, এ তো আমার ভাই হাশেমের ছেলে । এরপর থেকে শায়বা মোত্তালেবের কাছে প্রতিপালিত হয়ে যৌবনে পদার্পণ করেন। পরবর্তীকালে মোত্তালেব ইয়েমেন দেশের রোমানে মারা যান এবং তার রেখে যাওয়া পদ শায়বা লাভ করেন। আবদুল মোত্তালেব স্বজাতির মধ্যে এতো বেশি সম্মান মর্যাদা লাভ করেছিলেন যে, ইতিপূর্বে তার পিতৃপুরুষের কেউ এতোটা সম্মান মর্যাদালাভে সক্ষম হয়নি। স্বজাতির লোকেরা তাকে প্রাণ দিয়ে ভালো বেসেছে এবং অভূতপূর্ব সম্মান দিয়েছে।

আবদুল মোত্তালেবের দশ পুত্র ছিলো। তারা হলো: 
  1. হারেস, 
  2. যোবায়র,
  3.  আবু তালেব, 
  4. আবদুল্লাহ,
  5.  হামযা, 
  6. আবু লাহাব, 
  7. গায়দাক,
  8.  মোকাওয়েম,
  9.  সেফার এবং
  10.  আব্বাস।
 আবদুল মোত্তালেবের কন্যা ছিলো ছয় জন। তাদের নাম হলোঃ  
  1. উম্মুল হাকিম (বায়যা), 
  2. বাররা, 
  3. আতেকা, 
  4. সফিয়া,
  5.  আরওয়া 
  6. উমায়মা।

৩.আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব

আবদুল্লাহ ছিলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিতা। তার মায়ের নাম ফাতেমা। তিনি ছিলেন আমর ইবনে আয়েয ইবনে এমরান ইবনে মাখযুম ইবনে ইয়াকযা ইবনে মোররার কন্যা । আবদুল মোত্তালেবের সন্তানদের মধ্যে আবদুল্লাহ ছিলেন সবচেয়ে সুদর্শন, সচ্চরিত্র এবং সর্বজনপ্রিয়। তাকে বলা হতো যবীহ (যবাইকৃত)।

এরূপ বলার কারণ হচ্ছে, আবদুল মোত্তালেবের পুত্রদের সংখ্যা পুরোপুরি দশ এবং তারা নিজেদের রক্ষায় সমর্থ হওয়ার মতো বয়সে উন্নীত হওয়ার পর তিনি তাদের নিজের মানতের কথা জানান । সবাই তার কথা মেনে নেন । এরপর আবদুল মোত্তালেব ভাগ্য পরীক্ষার তীরের গায়ে তাদের সকলের নাম লিখে হোবল মূর্তির তত্ত্বাবধায়কের হাতে দেন।
 তত্ত্বাবধায়ক লটারি করলে আবদুল্লাহর নাম ওঠে। আবদুল মোত্তালেব আবদুল্লাহর হাত ধরেন ছুরি নিয়ে নেন এবং তাকে জবাই করতে কাবা ঘরের পাশে নিয়ে যান, কিন্তু সকল কোরায়শ বিশেষত আবদুল্লাহর ভাই আবু তালেব বাধা দেন। আবদুল মোত্তালেব বললেন, তোমরা যদি বাধা দাও তবে আমি মানত পূর্ণ করবো কিভাবে? তারা পরামর্শ দিলেন, আপনি কোন মহিলা সাধকের কাছে গিয়ে এর সমাধান চান। আবদুল মোত্তালেব এক মহিলা সাধকের কাছে গেলেন।

 সেই সাধক আবদুল্লাহ এবং দশটি উটের নাম লিখে লটারি করার পরামর্শ দেন। তবে বললেন, যদি আবদুল্লাহর নাম না ওঠে তবে দশটি করে উট বাড়াতে থাকবেন, যতোক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ খুশি না হন। এরপর যতোটি উটের নাম লটারিতে ওঠবে ততোটি জবাই করবেন। আবদুল মোত্তালেব ফিরে গিয়ে লটারি শুরু করেন। প্রথম দশটিতে আবদুল্লাহর নাম এলো না। 

এরপর দশটি করে বাড়াতে লাগলেন। একশ উট হওয়ার পর আবদুল্লাহর নাম ওঠে। এরপর আবদুল মোত্তালেব একশ উট জবাই করে সেখানেই ফেলে রাখেন। মানুষ পশু কারো জন্যে তাতে বাধা ছিলো না। এ ঘটনার আগ পর্যন্ত কোরায়শ এবং আরবদের মধ্যে রক্তপণের পরিমাণ ছিলো দশটি উট, কিন্তু এ ঘটনার পর সে পরিমাণ বাড়িয়ে একশ উট করা হয়। 
ইসলামও এ পরিমাণ যথারীতি বহাল রাখে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি দুই যবীহের সন্তান । একজন হযরত ইসমাঈল (আ.) অন্যজন আমার পিতা আবদুল্লাহ।আবদুল মোত্তালেব তার পুত্র আবদুল্লাহর বিয়ের জন্যে আমেনাকে মনোনীত করেন।

 আমেনা ছিলেন ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ ইবনে যোহরা ইবনে কেলাবের কন্যা। তারা বংশ মর্যাদায় কোরায়শদের মধ্যে সর্বোত্তম বলে বিবেচিত হতো। আমেনার পিতা বংশ মর্যাদা এবং আভিজাত্যে বনু যোহরা গোত্রের সর্দার ছিলেন। বিয়ের পর আমেনা পিত্রালয় থেকে বিদায় নিয়ে মক্কায় স্বামীগৃহে চলে আসেন। কিছুদিন পর আবদুল মোত্তালেব আবদুল্লাহকে খেজুর আনতে মদীনায় পাঠালে তিনি সেখানে ইন্তেকাল করেন।

মৃত্যুকালে তিনি পাঁচটি উট, এক পাল বকরী এবং বারাকা নামের এক হাবশী দাসী রেখে যান। যার কুনিয়ত ”উম্মে আয়মান।” উম্মে আয়মান রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুধ খাইয়েছিলেন।

মহানবী সাঃ এর জন্ম ও বংশ পরিচয় - হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বংশ তালিকা : লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠক আমরা আপনাদের সামনে মহানবী সাঃ এর জন্ম ও বংশ পরিচয়, হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বংশ তালিকা , আদম আঃ থেকে মুহাম্মদ সাঃ তালিকা এবং প্রিয় নবী সাঃ এর বংশের কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।

এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং আমাদের ফেসবুক পেজটিতে ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
2 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ২২ জুন, ২০২৩ এ ৪:৫৪ PM

    ৩য় পর্ব কবে আসবে? মোট কতটি পর্ব হবে?

    • RKO
      RKO ২২ জুন, ২০২৩ এ ৪:৫৮ PM

      ৩য় পর্ব আগামী শুক্রবার আসবে ইনশাআল্লাহ। প্রতি সপ্তাহে ৩ টি করে পর্ব আসবে ইনশাআল্লাহ। মোট কতটি হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ধন্যবাদ 💕

Add Comment
comment url

‍বিজ্ঞাপন

Google

abcd

ক্যরিয়ার

ইসলামিক ইনফো বাংলা

আমাদের ফেসবুক পেইজ