ব্রণ প্রতিরোধে ১২টি কার্যকর উপায়
প্রিয় পাঠক আমরা প্রায় সকলেই ব্রণ নিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকি। ব্রণ
বিশেষ করে ত্বকের অতিক্ষুদ্র ছিদ্র বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং অতিরিক্ত তেল উৎপাদনের
ফলে হয়। এটি শুধু মুখে নয়, ঘাড়, বুক এবং পিঠেও দেখা দিতে পারে, যা ত্বকের
সৌন্দর্যে বাধা সৃষ্টি করে।
যদিও এটি সাধারণ একটি সমস্যা, তবে সঠিক যত্ন এবং নিয়মিত স্কিন কেয়ার রুটিন
মানলে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আজকে আমরা ব্রণ প্রতিরোধে ১২টি কার্যকর
উপায় নিয়ে আলোচনা করব যা আপনাকে ব্রণ সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
ব্রণ প্রতিরোধে ১২টি কার্যকর উপায়
আমাদের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি ব্রণ কি , ব্রণ কেন হয় এবং ব্রণ
প্রতিরোধে ১২টি কার্যকর উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই আশা করব আমাদের পোস্টটি
শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
ব্রণ কি?
ব্রণ হলো ত্বকের একধরনের সমস্যা, যা সাধারণত মুখ, কপাল, গলা, বুক ও পিঠে দেখা
যায়। এটি তখন হয় যখন ত্বকের অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে এবং ত্বকের মৃত কোষ বা
ময়লা ত্বকের লোমকূপের মধ্যে জমা হয়। এই কারণে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায় এবং
সেখানে ব্যাকটেরিয়া জমা হয়ে প্রদাহ বা সংক্রমণ ঘটায়। এর ফলে লালচে ফুসকুড়ির
মতো ব্রণ দেখা দেয়।
আরো পড়ুনঃ কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয় । যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে কাতিলা গাম । মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম করার নিয়ম
ব্রণ কেন হয়?
প্রিয় পাঠক বিভিন্ন কারণে আমাদের ত্বকে ব্রণ হতে পারে। এর মধ্যে
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলোঃ
- হরমোনের পরিবর্তনঃ বয়ঃসন্ধিকাল বা টিনএজ থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ত্বকের তেল উৎপাদন বেড়ে যায়, যা ব্রণ বাড়াতে পারে।
- জেনেটিক্স বা বংশগত কারণঃ অনেক সময় ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বংশগত হয়। যদি পরিবারের সদস্যদের ব্রণের সমস্যা থাকে, তাহলে আপনারও ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- অতিরিক্ত তেল ও ময়লাঃ যাদের ত্বক বেশি তৈলাক্ত, তাদের ত্বকে সহজেই ময়লা জমে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা ব্রণ সৃষ্টি করে।
- খাদ্যাভ্যাসঃ তৈলাক্ত খাবার, চিনি ও দুগ্ধজাত পণ্য বেশি খেলে ব্রণের সমস্যা বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
- স্ট্রেস বা মানসিক চাপঃ স্ট্রেস ত্বকের তেলের উৎপাদন বাড়ায়, যা ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে ব্রণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
ব্রণ প্রতিরোধে ১২টি কার্যকর উপায়
পাঠক চলুন এবার আমরা সংক্ষেপে ব্রণ প্রতিরোধে ১২টি কার্যকর
উপায় সমূহ জেনে নেইঃ
- মুখ পরিষ্কার রাখা
- ত্বকের ধরন সম্পর্কে জানুন
- নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
- ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) ব্রণ প্রতিকারক ব্যবহার
- প্রচুর পানি পান করুন
- মেকআপ সীমিত করুন
- হাত দিয়ে ব্রণ না খোটা
- সূর্যের আলো থেকে ত্বকের সুরক্ষা
- খাবারের নিয়ন্ত্রণ
- টি ট্রি অয়েল ব্যবহার
- প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন
- স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ।
ব্রণ প্রতিরোধে ১২টি কার্যকর উপায় : বিস্তারিত
ত্বকের যত্নে অবহেলার পাশাপাশি শারীরিক এবং পরিবেশগত বিভিন্ন কারণে ব্রন হতে
পারে। সঠিক পরিচর্যা, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, এবং পরিশ্রুত জীবনযাপন ব্রণ
প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা সম্ভব।
মুখ পরিষ্কার রাখা
ত্বকের পোরগুলোতে ময়লা, তেল ও জীবাণু জমে ব্রণ সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য দিনে
অন্তত দুবার মুখ ধোয়া জরুরি। অতিরিক্ত মুখ ধোয়ার ফলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কমে
যায়, যা ত্বককে আরও বেশি তেল উৎপাদনে বাধ্য করে।
আরো পড়ুন: উকিল/অ্যাডভোকেট/ব্যারিস্টার হতে কি করবেন ? । হ দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম । ধৈর্যশীল হতে করণীয় সমূহ কি?
প্রথমে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভিজিয়ে নিন। এরপর মৃদু ক্লেনজার নিয়ে আঙুল
দিয়ে বৃত্তাকার গতিতে ত্বকে ম্যাসাজ করে ময়লা পরিষ্কার করুন। শেষে ঠান্ডা পানি
দিয়ে ধুয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছুন। বাংলাদেশে বেশ কিছু ভালো মানের
ক্লেনজার পাওয়া যায়।এগুলির মধ্যে অন্যতম-
COSRX স্যালিসাইলিক অ্যাসিড যুক্ত ক্লেনজার, পন্ডস পিওর হোয়াইট ফেসওয়াশ, নিভিয়া অয়েল কন্ট্রোল ফেসওয়াশ
ত্বকের ধরন সম্পর্কে জানুন
নিজের ত্বকের ধরন বুঝে প্রসাধনী ব্যবহার করলে ব্রণ প্রতিরোধ সহজ হয়। চার ধরনের
ত্বক হয়: তৈলাক্ত, শুষ্ক, মিশ্র এবং সংবেদনশীল। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের সমস্যা
বেশি হয় কারণ এটি বেশি তেল উৎপাদন করে।সংবেদনশীল ত্বকে যেকোনো নতুন পণ্য ব্যবহার
করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।আপনার ত্বকের ধরন বুঝে উপযুক্ত পণ্য নির্বাচন করুন।
বিশেষত তৈলাক্ত ত্বকের জন্য নন-কমেডোজেনিক এবং অয়েল-ফ্রি পণ্য ব্যবহার করা উচিত।
নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক আর্দ্র থাকে এবং তেল উৎপাদন কম হয়। ত্বক শুষ্ক
হয়ে গেলে এটি বেশি তেল উৎপাদন শুরু করে, যা ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে ব্রণ সৃষ্টি
করে। তবে, সব ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্রণ প্রতিরোধে সহায়ক নয়। নন-কমেডোজেনিক এবং
অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।বাংলাদেশে জনপ্রিয় ময়েশ্চারাইজার:
সেরাভে ময়েশ্চারাইজিং লোশন, নিভিয়া সফ্ট ক্রিম।
ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) ব্রণ প্রতিকারক ব্যবহার
বাজারে পাওয়া বিভিন্ন ব্রণ প্রতিরোধক ওষুধ ব্রণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। যেমন
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ব্ল্যাকহেড এবং হোয়াইটহেড কমায়, বেঞ্জয়েল পারক্সাইড
প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং সালফার মৃদুভাবে ত্বকের মৃত কোষ দূর করে।
প্রথমে প্যাচ টেস্ট করে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার ত্বকে কোনো
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নির্দেশনা অনুযায়ী দিনে এক বা দুইবার ব্যবহার করুন।বাংলাদেশে পাওয়া ব্রণ প্রতিরোধক ক্রিম:
অ্যাকনেক্স জেল, অ্যাক্রেটিন ক্রিম।
প্রচুর পানি পান করুন
পানি শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং ত্বক আর্দ্র রাখে। ত্বকে আর্দ্রতা কমে গেলে
শরীর ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করার জন্য অতিরিক্ত তেল উৎপন্ন করে, যা ব্রণ
সৃষ্টি করে। প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি পান করুন। ব্যায়াম করার পর, গরম
আবহাওয়ায়, বা গর্ভাবস্থায় পানি পানের পরিমাণ বাড়ানো উচিত।
মেকআপ সীমিত করুন
মেকআপ ত্বকের লোমকূপ বন্ধ করে দেয়, যা ব্রণের সমস্যাকে আরও বাড়াতে পারে। বিশেষ
করে যদি আপনার ত্বকে ব্রণের প্রবণতা থাকে, তাহলে মেকআপ ব্যবহার কমিয়ে
দিন।অয়েল-ফ্রি এবং নন-কমেডোজেনিক মেকআপ ব্যবহার করুন। দিনে শেষে মেকআপ অবশ্যই
ত্বক থেকে পরিষ্কার করে ফেলুন এবং রাতের বেলায় মেকআপ ছাড়া ঘুমান।বাংলাদেশে পাওয়া অয়েল-ফ্রি ফাউন্ডেশন:
মেবেলিন ফিট মি, রেভলন কোলার স্টে।
হাত দিয়ে ব্রণ না খোটা
ব্রণ খুঁটলে ত্বকে স্থায়ী দাগ পড়ার সম্ভাবনা থাকে এবং সংক্রমণও হতে পারে। তাই
ব্রণ খুঁটবেন না, কারণ এটি সংক্রমণ বৃদ্ধি করে ত্বকের অবস্থা আরও খারাপ করতে
পারে।এছাড়াও মুখে হাত দিলে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া স্থানান্তরিত হয়, যা ত্বকের
লোমকূপে আটকে থেকে ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে। দিনভর সচেতনভাবে মুখে হাত দেওয়া
এড়িয়ে চলুন এবং হাত পরিষ্কার রাখুন।
সূর্যের আলো থেকে ত্বকের সুরক্ষা
সূর্যের অতিরিক্ত আলো ত্বক শুষ্ক করে এবং এতে তেল উৎপাদন বাড়ে, যা ব্রণের
সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, যা ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বকের
আর্দ্রতা ধরে রাখে।বাংলাদেশে জনপ্রিয় সানস্ক্রিন: এলটিএমডি ইউভি
ক্লিয়ার, নিভিয়া সান প্রোটেক্ট।
খাবারের নিয়ন্ত্রণ
প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি, এবং দুগ্ধজাত খাবার ব্রণ বাড়াতে পারে। গবেষণায় দেখা
গেছে যে ফাস্টফুড, মিষ্টি পানীয়, এবং অতিরিক্ত চিনি ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য
ক্ষতিকর।প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার খান। হরমোন নিয়ন্ত্রণে
আসলে ব্রণও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
টি ট্রি অয়েল ব্যবহার
টি ট্রি অয়েল প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের জীবাণু দূর
করতে সহায়ক। টি ট্রি অয়েলে থাকা টার্পিনেন-৪ যৌগ জীবাণু ধ্বংস করে এবং ত্বককে
সুস্থ রাখে।এক বা দুই ফোঁটা টি ট্রি অয়েল ত্বকের ব্রণযুক্ত স্থানে লাগান।
ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করুন, বিশেষত সংবেদনশীল ত্বকের জন্য।বাংলাদেশে পাওয়া টি ট্রি অয়েল: দ্যা বডি শপ টি ট্রি অয়েল, দ্যা অর্ডিনারি টি ট্রি অয়েল।
প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন
যদি ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ কাজে না লাগে, তাহলে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে পারেন। অ্যান্টিবায়োটিক ত্বকের জীবাণু কমাতে
সহায়ক এবং প্রদাহ কমায়।বাংলাদেশে জনপ্রিয় অ্যান্টিবায়োটিক:
ক্লিন্ডামাইসিন জেল, মেট্রোনিডাজল জেল।
স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ
স্ট্রেস ত্বকের ক্ষতির কারণ হতে পারে, কারণ স্ট্রেসের ফলে হরমোনের স্তর বৃদ্ধি
পায় যা ত্বকের তেল উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা
অন্যান্য মানসিক প্রশান্তির কার্যক্রম ব্রণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ব্রণ প্রতিরোধে ১২টি কার্যকর উপায় : লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে ব্রণ প্রতিরোধে ১২টি কার্যকর উপায় সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করলাম । ব্রণ প্রতিরোধ এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে
নিয়মিত যত্ন এবং ধৈর্য জরুরি। সঠিক স্কিন কেয়ার রুটিন, স্বাস্থ্যকর খাবার
গ্রহণ, এবং জীবাণুমুক্ত অভ্যাস গড়ে তুললে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। আপনার ত্বক
একদম ভিন্ন, তাই নিজের ত্বকের প্রয়োজন এবং সমস্যা বুঝে সঠিক পদক্ষেপ নিলে আপনি
দীর্ঘস্থায়ীভাবে ব্রণ মুক্ত ও স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে পারেন।এরকম প্রয়োজনীয় আরও
তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং আমাদের ফেসবুক পেজটিতে ফলো
দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।