মুহাম্ম্দ(সাঃ)

bangla

ইতিকাফ কি ? - ইতিকাফ করার নিয়ম - ইতিকাফ সংক্রান্ত মাসআলা

প্রিয় পাঠক পবিত্র মাহে রমজান মাস চলমান রয়েছে এই মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান ইতিকাফ। আমরা আপনাদের সামনে ইতিকাফ কি ? , ইতিকাফ করার নিয়ম এবং ইতিকাফ সংক্রান্ত মাসআলা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ইতিকাফ কি ? - ইতিকাফ করার নিয়ম
আমাদের আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি ইতিকাফ কি ? , ইতিকাফ করার নিয়ম , ইতিকাফ শব্দের অর্থ কি , ইতিকাফ কত প্রকার , ইতিকাফ করা কি ফরজ ? , ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা যাবে কিনা , ইতিকাফ ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ইতিকাফ কি ? - ইতিকাফ করার নিয়ম - ইতিকাফ সংক্রান্ত মাসআলা

ইতিকাফ কি ?

মাহে রমজানের ২০ তারিখ সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পূর্ব হতে ২৯ বা ৩০ তারিখ অর্থাৎ যে দিন ঈদের চাঁদ দেখা যাবে সে তারিখের সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুরুষদের মসজিদে ও নারীদের নিজ গৃহের নির্দিষ্ট নামাজ পড়ার জায়গায় আল্লাহর ধ্যানে ইবাদতের মাধ্যমে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে।

একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না যদি সেহেরি এবং ইফতার পৌঁছে দেওয়ার মত কেউ থাকে তাহলে তার জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ নেই।ইতিকাফকারী ব্যক্তি সার্বক্ষণিক দোয়া, জিকির আজগার, কোরআন তেলাওয়াত, নামাজ, ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকবেন।

ইতিকাফ শব্দের অর্থ কি

ইতিকাফ শব্দের অর্থ অবস্থান করা, নিঃসঙ্গ থাকা, সার্বক্ষণিক সঙ্গ, বিচ্ছিন্ন থাকা ইত্যাদি। একজন ইতিকাফকারী মসজিদে অবস্থান করবেন দুনিয়াবী সকল প্রকার কাজকর্ম থেকে বিরত থাকবেন এবং সার্বক্ষণিক নামাজ কোরআন তেলাওয়াত জিকির আজগারে ব্যস্ত থাকবেন অর্থাৎ দুনিয়ার সাথে তার সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে।

ইতিকাফ কত প্রকার

ইতিকাফ তিন প্রকার । যথা- 
  1. ওয়াজিব 
  2. সুন্নতে মুয়াক্কাদা 
  3. মোস্তাহাব ।
ওয়াজিব : ওয়াজিব ইতিকাফ হলো মানতের ইতিকাফ । চাই সে মানত শর্তহীন হোক । যেমন- কেউ কোনো শর্ত ব্যতিরেকে এমনিতেই ইতিকাফের মানত করল । অথবা কোনো শর্তযুক্ত মানত, যেমন- কেউ বলল যে, যদি আমার অমুক কাজটি হয়ে যায়, তবে আমি ইতিকাফ করব।

সুন্নতে মুয়াক্কাদা : রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসূলে করীম (সা.) নিয়মিত এ ইতিকাফ পালন করেছেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেউ কেউ আদায় করলে সকলের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যায়।

মোস্তাহাব : রমজানের শেষ দশ দিন ব্যতীত অন্য কোনো সময় ইতিকাফ করা মোস্তাহাব। সে ইতিকাফ রমজানের প্রথম দশ দিন হোক বা দ্বিতীয় দশ দিন হোক বা অন্য যে কোনো মাসে হোক ।

ইতিকাফ করার নিয়ম

  • ইতিকাফের জন্য তিনটি বিষয় আবশ্যক –১.নামাজের জামাত হয় এরূপ কোনো মসজিদে অবস্থান করা।২.ইতিকাফের নিয়তে অবস্থান করা। সুতরাং ইতিকাফের নিয়ত ও ইরাদা ব্যতিরেকে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলা হয় না।৩.হায়েয-নেফাস ও গোসলের প্রয়োজন থেকে পাক হওয়া 
  • ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত । যখন কেউ এরূপ ইতিকাফ করবে, তখন রোজা রাখাও তার জন্য আবশ্যক হবে। এমনকি যদি কেউ কেবল রাত্রে ইতিকাফ করার নিয়ত করে, তবে তা অনর্থক সাব্যস্ত হবে। কেননা রাত রোজার ক্ষেত্র নয়।
  • রোজা শুধু ইতিকাফের উদ্দেশ্যে রাখা জরুরি নয়, যে উদ্দেশ্যেই রাখা হোক, তা ইতিকাফের জন্য যথেষ্ট হবে। যেমন- কেউ রমজান মাসে ইতিকাফ করার মানত করল, তখন রমজানের রোজা তার জন্য যথেষ্ট হবে। অবশ্য ইতিকাফের রোজা ওয়াজিব হওয়া আবশ্যক । এ জন্য নফল রোজা যথেষ্ট হবে না ।
  • সুন্নত ইতিকাফে তো রোজা থাকেই, এ জন্য রোজা শর্ত করার প্রয়োজন নেই ।
  • পবিত্র রমজানের ইতিকাফের পরিমাণ দশ দিন। কেননা সুন্নত ইতিকাফ রমজানের শেষ দশ দিনে করতে হয়।
  • যে প্রয়োজনে ইতিকাফের মসজিদ থেকে বাইরে যাবে সে প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার পর সেখানে অবস্থান করবে না এবং যথাসম্ভব মসজিদের অপেক্ষাকৃত নিকটতম স্থানে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করবে। যেমন- পায়খানার জন্য বাইরে গেলে যদি তার নিজের বাড়ি দূরে হয় এবং তার কোনো বন্ধু-বান্ধবের বাড়ি নিকটে থাকে, তবে সেখানে প্রয়োজন সেরে নেবে।
  • কারো যদি নিজের বাড়িতে প্রয়োজন সারতে অভ্যস্ত হয় এবং অন্যত্র গেলে সে প্রয়োজন যথাযথভাবে পূর্ণ হবার নয়, তবে নিজের বাড়িতে গিয়ে প্রয়োজন সারাও জায়েজ।
  • ভুলক্রমেও নিজের ইতিকাফের মসজিদের বাইরে এক মিনিট বা তার চেয়ে কম সময় অবস্থান করা জায়েজ নয় ।

ইতিকাফ করা কি ফরজ

রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসূলে করীম (সা.) নিয়মিত এ ইতিকাফ পালন করেছেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেউ কেউ আদায় করলে সকলের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যায়। যদি একটি এলাকার কেউ ইতিকাফ না করে তাহলে ওই এলাকার সকলেই গুনাহগার হবে।

ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা যাবে কিনা

খুব জরুরী প্রয়োজনে কিংবা খাবার সংক্রান্ত বিষয় , পরিবারের অসুস্থ কেউ থাকলে তার খোঁজ খবর নেওয়া সংক্রান্ত বিষয়, কোরআন তেলাওয়াত শোনা, ওয়াজ মাহফিল শোনা, ইসলামি আলোচনা শোনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা যাবে। এর বাইরে জরুরি কারণ ব্যতীত বিনা কারণে ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না।

ইতিকাফ ভঙ্গের কারণ

ই'তিকাফ অবস্থায় দুই ধরনের কাজ করা হারাম । এরূপ হারাম কাজে লিপ্ত হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে এবং তার কাজা আদায় করতে হবে। আর মোস্তাহাব ইতিকাফ হলে তা সমাপ্ত হয়ে যাবে। কেননা মোস্তাহাব ইতিকাফের জন্য কোনো সময় নির্ধারিত নেই। সুতরাং তার কাজাও করতে হবে না ।

১ম প্রকার : ইতিকাফের জায়গা থেকে বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া। প্রয়োজন বলতে এখানে মানবীয় প্রয়োজন ও শরয়ী প্রয়োজন উভয়টি শামিল রয়েছে। মানবীয় প্রয়োজন, যেমন- পায়খানা, পেশাব, গোসল । খাবার আনার মতো কেউ না থাকলে খাবার খেতে যাওয়াও মানবীয় প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। শরয়ী প্রয়োজন, যেমন- জুমার নামাজ ৷
২য় প্রকার : এমন কার্যকলাপ যা ইতিকাফ অবস্থায় করা না জায়েজ, যেমন- সঙ্গম ইত্যাদি করা। ইচ্ছাকৃভাবে করা হোক বা অনিচ্ছাকৃতভাবে অর্থাৎ ইতিকাফের কথা মনে না থাকার কারণে করা হোক, মসজিদের ভিতরে করা হোক বা মসজিদের বাইরে করা হোক ; সর্বাবস্থায় ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

ইতিকাফ সংক্রান্ত মাসআলা

  1. মাসজিদে হারামে ইতিকাফ করা সর্বোত্তম, তারপর মাসজিদে নববীতে, তারপর বায়তুল মুকাদ্দাসে, তারপর জামে মসজিদে, যেখানে জামাতে নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা থাকে। জামে মসজিদে যদি জামাতে নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা না থাকে, তবে মহল্লার মসজিদে, তারপর এমন মসজিদে যেখানে জামাত বেশি হয়।
  2. কেউ নফল রোজা রাখল এবং সে দিন ইতিকাফ করার মানত করল, তবে এরূপ মানত করা সঠিক হবে না ।
  3. কেউ সম্পূর্ণ রমজান মাস ইতিকাফ করার মানত করে, কিন্তু ঘটনাক্রমে রমজান মাসে তা পালন করতে পারল না, তবে সে যদি রমজান মাসের পরিবর্তে অন্য কোনো মাসে তার ইতিকাফ পালন করে নেয়, তবে এতে তার মানত পূর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু এ জন্য ধারাবহিকভাবে রোজা রাখতে হবে এবং সে রোজা পালন অবস্থায় ইতিকাফ করতে হবে।
  4. যে সকল বিষয় প্রায়শ সংঘটিত হয় না, তদ্রূপ কোনো বিশেষ কারণে নিজের ইতিকাফের স্থান ছেড়ে যাওয়া সঠিক নয়। যেমন- কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া বা কোনো ডুবন্ত ব্যক্তিকে বাচানোর চেষ্টা করা বা আগুন নিভাতে যাওয়া অথবা মসজিদ ধসে পড়ার ভয়ে মসজিদের বাইরে যাওয়া।এসব অবস্থায় ইতিকাফের স্থান থেকে বাইরে যাওয়া গুনাহ নয় ; বরং প্রাণ বাঁচানোর জন্য জরুরি, তবু ইতিকাফ বহাল থাকবে না।
  5. যদি কোনো শরয়ী বা মানবীয় প্রয়োজনে বাইরে গিয়ে থাকে এবং এরই মাঝে অর্থাৎ সেই প্রয়োজন পূর্ণ করার পূর্বে বা পরে কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায় অথবা জানাযার নামাজে শরিক হয়, তবে তাতে কোনো সমস্যা নেই ।
  6. জুমার নামাজের জন্য অন্য কোনো মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন হলে এমন সময় যেতে হবে যেন সেখানে পৌঁছে তাহিয়্যাতুল মসজিদ ও জুমার সুন্নত পড়তে পারেন এবং নামাজের পরেও সেখানে সুন্নত পড়ার জন্য অবস্থান করা জায়েজ।
  7. যদি কাউকে জোরপূর্বক ইতিকাফের স্থান থেকে বের করে দেওয়া হয়, তবু তার ইতিকাফ বহাল থাকবে না।যেমন- তার কোনো অপরাধে সরকারের পক্ষ থেকে গ্রেফতারির পরওয়ানা জারি হয় এবং পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় বা কেউ তাকে ঋণের দায়ে ইতিকাফের স্থান থেকে বাইরে নিয়ে যায় ।
  8. যদি কোনো শরয়ী বা মানবীয় প্রয়োজনে ইতিকাফের স্থান থেকে বাইরে যায় এবং পথে কোনো দাতা তাকে আটক করে অথবা সে অসুস্থ হয়ে পড়ে, ফলে ইতিকাফের স্থান পর্যন্ত বিলম্ব হয়ে যায় তবু ইতিকাফ বহাল থাকবে না ।
  9. ইতিকাফ অবস্থায় একেবারে চুপ করে বসে থাকাও মাকরূহে তাহরীমী। অবশ্য মন্দ কথা মুখ থেকে বের করবেন না, মিথ্যা কথা বলবেন না, গিবত করবেন না বরং কুরআন তেলাওয়াতে, কোনো দীনি ইলম শিক্ষা করা বা শিক্ষা দেওয়া বা অন্য কোনো ইবাদতে সময় অতিবাহিত করবেন। সারকথা এই যে, চুপ করে বসে থাকা কোনো ইবাদত নয় ।

ইতিকাফ কি ? - ইতিকাফ করার নিয়ম - ইতিকাফ সংক্রান্ত মাসআলা : লেখক এর মতামত

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা ইতিকাফ কি ? , ইতিকাফ করার নিয়ম , ইতিকাফ শব্দের অর্থ কি , ইতিকাফ কত প্রকার , ইতিকাফ করা কি ফরজ ? , ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা যাবে কিনা , ইতিকাফ ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।

এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং গুগল নিউজে আমাদের পেজটিতে ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

‍বিজ্ঞাপন

Google

abcd

ক্যরিয়ার

ইসলামিক ইনফো বাংলা

আমাদের ফেসবুক পেইজ