যে সকল খাবারের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী - রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার কোনগুলো

রাজশাহী হচ্ছে উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র। প্রতিটি এলাকার মত রাজশাহীর নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য রয়েছে। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার কোনগুলো- যে সকল খাবারের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী।
যে সকল খাবারের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী
রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার কোনগুলো এ কথাটি আমাদের মাথায় আসলে প্রথমেই যে খাবারের কথা আমাদের মনে পড়ে সেটি হচ্ছে আম। আমরা সকলেই জানি রাজশাহী আমের জন্য বিখ্যাত তবে আজকে আমরা আম ব্যতীত অন্যান্য যে সকল খাবারের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার কোনগুলো- যে সকল খাবারের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী

এক নজরে রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার কোনগুলো-

  1. কালাই এর রুটি এবং বেগুন ভর্তা
  2. সিটি হাটের কালা ভুনা
  3. মড়মড়িয়া হাটের হাঁসের মাংস
  4. সিএনবি মোড়ের গরম মিষ্টি
  5. নিউ মার্কেটের ভাংচুর বার্গার
  6. বর্ণালীর চা
  7. আলুপট্টির ফুচকা
  8. বাটার মোড়ের জিলাপি
  9. হোবা ঘোষের মিষ্টি

যে সকল খাবারের জন্য বিখ্যাত রাজশাহীঃ বিস্তারিত জেনে নিন

কালাই এর রুটি এবং বেগুন ভর্তা

রাজশাহীবাসীর পছন্দের এবং জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে যে সকল খাবারের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী তার তালিকায় প্রথমেই থাকবে কালাই এর রুটি এবং বেগুন ভর্তা। রাজশাহী শহরের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়েই পাওয়া যায় কালাই এর রুটির দোকান। রাজশাহীবাসীর প্রায় সকলের পছন্দের খাবার এই কালায়ের রুটি।

রাজশাহীবাসীর পাশাপাশি বিশেষ করে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যারা রাজশাহীতে আসেন তাদের অনেকেই রাজশাহীতে আসার পরেই কালাই এর রুটি এবং বেগুন ভর্তার খোঁজ করেন। রাজশাহী শহরে অনেকগুলো কালাই এর রুটির দোকান রয়েছে এর মধ্যে সবচাইতে বিখ্যাত উপশহরে অবস্থিত কালাই হাউস। এখানে পাশাপাশি তিনটি কালাই এর রুটির দোকান রয়েছে।

আপনি চাইলেই সহজেই উপশহর বাজারের পাশেই অবস্থিত কালাই হাউসে এসে কালাই এর রুটি এবং বেগুন ভর্তার স্বাদ নিতে পারেন। এর পাশাপাশি রাজশাহীর প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ মোরেই কালাই এর রুটির দোকান রয়েছে। স্থানভেদে এক একটি কাকালাই এর রুটির দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে।

বেগুন ভর্তার জন্য ১০ থেকে ১৫ টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হয়। রাজশাহীর প্রায় সকল কালারের রুটির দোকানে বিকাল পাঁচটা থেকে রাত্রি ১১ঃ০০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সকালে পদ্মা নদীর আশেপাশে কিছু দোকানে পাওয়া যায় তা ব্যতীত অধিকাংশ দোকানে বিকাল ৫ টা আগ পর্যন্ত বন্ধ থাকে।

সিটি হাটের কালা ভুনা

যে সকল খাবারের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী তার মধ্যে অন্যতম সিটি হাটের কালা ভুনা। পুরো সিটি হাটে ১০-১৫ টি কালা ভুনার দোকান রয়েছে।সিটি হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতার পাশাপাশি প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক মানুষ সিটি হাটে শুধুমাত্র কালা ভুনার স্বাদ গ্রহণের জন্য। সিটি হাটে পাঁচ থেকে দশ পিসের এক বাটি কালা ভুনার দাম পড়বে ৮০ থেকে ১৫০ টাকার মতো।
তার সাথে ভাতের জন্য আপনাদের আলাদা করে প্লেট প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচ করতে হবে। রাজশাহী মহানগরীর যে কোন স্থান থেকেই অটো বা রিক্সা যোগে সহজেই যাওয়া যায় সিটি হাটে। তবে এখানে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সিটি হাটের অধিকাংশ কালা ভুনার দোকানে সন্ধ্যার পরে বন্ধ হয়ে যায়। তাই আপনাকে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে সিটি হাটের কালা ভুনা স্বাদ গ্রহণ করতে বিকালের আগেই যে কোন সময় যাওয়ার জন্য।

মড়মড়িয়া হাটের হাঁসের মাংস

রাজশাহীর খাদ্য প্রেমীদের কাছে নতুন একটি আকর্ষণ মড়মড়িয়া হাটের হাঁসের মাংস। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে দারুশা ইউনিয়নে অবস্থিত এই মড়মড়িয়া হাট। আজ থেকে দুই বছর আগেও এই হাটকে রাজশাহীর মানুষ খুব একটা চিনত না। তারপরে শুধুমাত্র হাসের মাংসের জন্যই বিখ্যাত হয়ে ওঠে এই এলাকাটি।

 রাজশাহী শহরে বিভিন্ন স্থানে হাঁসের মাংস পাওয়া গেলেও স্বাদে গুনে অনন্য মড়মড়িয়া হাটের হাঁসের মাংস। মড়মড়িয়া হাটে আসলে পাশাপাশি তিন থেকে চারটি হাঁসের মাংসের দোকান দেখা যাবে তবে এগুলোর মধ্যে সবচাইতে বিখ্যাত কুটুমবাড়ি হোটেল। প্রতিদিন আশেপাশের অঞ্চল থেকে বহু সংখ্যক মানুষ কুটুম বাড়িতে আসেন হাঁসের মাংস খেতে।

প্রতি বটে হাঁসের মাংস ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয় এখানে। মড়মড়িয়া হাটে যেতে হলে রাজশাহীর যে কোন প্রান্ত থেকে আপনাকে প্রথমে রাজশাহীর কোট স্টেশনে আসতে হবে এরপর কোর্ট স্টেশন থেকে লিলি হলের মোড় হয়ে  আপনাকে মড়মড়িয়া হাটে যেতে হবে।

সিএনবি মোড়ের গরম মিষ্টি

রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার কোনগুলো জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে সিএনবি মোড়ের গরম মিষ্টির কথা। সারাদিন পিন পতন নীরবতা থাকলেও সন্ধ্যার পরেই রাজশাহীর সিএনবি মোড়ে অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে। এমনকি অনেকে সপরিবারে আসেন শুধুমাত্র এই মোড়ের গরম মিষ্টি এবং পুরী খাওয়ার জন্য। সিএনবি মোরে পাশাপাশি দুটি দোকান রয়েছে গরম মিষ্টির।

প্রতিটি দোকানেই ভালো মানের মিষ্টি এবং পুরী সরবরাহ করা হয়। এখানে প্রতি পিস মিষ্টি ২০ টাকা দরে এবং প্রতি পিস পুরি দশ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। মানসম্মত এবং আকর্ষণীয় খাবার হওয়ায় খুব দ্রুতই ব্যাপক সুনাম এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে সিএনবি মোড়ের এই মিষ্টির দোকানগুলো।
প্রতিদিন এই দুটি দোকানে প্রায় ১০০ কেজির মত মিষ্টি বিক্রি হয়। আপনি যদি সপরিবারে এখানে আসতে চান তাহলে রাজশাহীর যেকোন প্রান্ত হতেই খুব সহজে অটো কিংবা রিক্সা যোগে আসতে পারেন রাজশাহীর সিএনবি মোড়ে।

নিউ মার্কেটের ভাংচুর বার্গার

যারা রাজশাহী নিউমার্কেটে ঘুরতে এসেছেন বা কেনাকাটা করতে এসেছেন তারা সকলেই একবারের জন্য হলেও নিউমার্কেটের বিখ্যাত ভাঙচুর বার্গার বা ভাঙচুর পুরি খেয়েছেন। নাম শুনে ভাঙচুর মনে হলেও আসলে বিষয়টি কোন ভাঙ্গা চুরার নয়। এখানে মূলত প্রায় ১৫ থেকে ১৬ রকমের উপাদান একত্রে মিশ্রিত করে তৈরি করা হয় একেকটি বার্গার বা পুরী।

রাজশাহীবাসীর কাছে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় নিউমার্কেটের এই ভাঙচুর বার্গার। রবিবার ব্যতীত প্রায় প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত অব্দি এই ব্যবসা চলতে থাকে। ৩০ টাকা দরে প্রতিটি বার্গার বা পুরি বিক্রি করা হয়। 

পাশাপাশি দুটি দোকান থাকায় দুটি দোকানের বিক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা চলে কে কার চাইতে কম দামে ভালো সার্ভিস দিতে পারবে। আপনি অনায়াসেই দুটি দোকানের বার্গার টেস্ট করে দেখতে পারেন। রাজশাহী নিউমার্কেটের নিচ তলায় পশ্চিম পাশে কাঁচাবাজারের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেটের ভাংচুর বার্গার এর দোকান।

বর্ণালীর চা

রাজশাহীবাসীর কাছে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের বা চা প্রেমী লোকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা হচ্ছে বর্ণালীর মোড়। এই বর্ণালীর মোড় এত জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম কারণ এই মোড়ের বিখ্যাত চা। বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান পাবেন এর মধ্যে সবচাইতে বিখ্যাত মোড়ের ডান পাশে অবস্থিত শরিফ টি গার্ডেন এবং মোড় থেকে একটু সামনে এসে রকি টি স্টল বা রাজশাহীর তন্দুরি চায়ের দোকান।
এই দুটি দোকানে মূলত রাজশাহী শহরে একচেটিয়া চায়ের ব্যবসা করে থাকে। রাজশাহীর অন্যান্য স্থানের চাইতে চায়ের দাম তুলনামূলক বেশি হলেও স্বাদে গুণে কোন অংশে কম নয়। বিশেষ করে শরিফ টি গার্ডেনের মালাই চা রাজশাহীর মধ্যে সবচাইতে শ্রেষ্ঠ মালাই চা  আর   রকি টি স্টল বা  তন্দুরি চায়ের দোকানের বিখ্যাত তন্দুরি চা।  রাজশাহী শুধুমাত্র এই একটি দোকানেই তন্দুরি চা পাওয়া যায়। আপনি আপনার পরিবার নিয়ে খুব সহজেই বর্ণালী মোড়ে গিয়ে এই দুটি দোকান থেকে চায়ের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন।

আলুপট্টির ও গল্পকথার ফুচকা

রাজশাহীতে যারা ফুচকা খেতে পছন্দ করেন তাদের পছন্দের তালিকায় প্রথমে যে দুটি নাম থাকে সে দুটি হচ্ছে আলুপট্টি এবং গল্পকথা। আলুপট্টিতে ইসলামী ব্যাংকের নিচে প্রতিদিন বিকাল থেকে উন্নত মানের এবং আকর্ষণীয় ফুচকা পাওয়া যায়। এখানে সবচাইতে আকর্ষণীয় জিনিসটি হচ্ছে ফুচকার সাথে যে টক বা তেতুল ব্যবহার করা হয় সেটি। 

রাজশাহীর ফুচকা প্রেমী মানুষদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা হচ্ছে গল্পকথা। গল্পকথা মূলত একটি রেস্টুরেন্টের নাম যেটি রাজশাহীর নিউ মার্কেটের প্রধান গেটের বিপরীত দিকে অবস্থিত। আপনি যদি ফুচকা প্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার আলুপট্টি ও গল্প কথার ফুচকা একবার হলেও টেস্ট করা উচিত।

বাটার মোড়ের জিলাপি

যে সকল খাবারের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাটার মোড়ের জিলাপি। একেবারে ছোট্ট একটি দোকানে অল্প কয়েকজন কর্মচারী এবং কারিগরের মাধ্যমে পরিচালিত হয় বাটার মোড়ের জিলাপির দোকানটি। দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর যাবত পরিচালিত হয়ে আসছে দোকানটি। একেবারেই নিরিবিলি এবং জাঁকজমকহীন দোকান এটি।

দোকান দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখানকার জিলাপি রাজশাহীর মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয়। বাটার মোড়ে যেতে আপনি রাজশাহী জিরো পয়েন্ট কিংবা রেলগেট যে কোন স্থান থেকে অটোতে উঠলে মাত্র পাঁচ টাকা ভাড়ায় আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন। প্রতি কেজি জিলাপি ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হয় এখানে। প্রায় বেশিরভাগ দিনই ক্রেতাদেরকে লাইন দিয়ে জিলাপি সংগ্রহ করতে হয়। রাজশাহীতে আপনি যদি জিলাপির আকর্ষণীয় স্বাদ উপভোগ করতেচান তাহলে অবশ্যই আপনাকে বাটার মোড়ের জিলাপি খেতে হবে।

হোবা ঘোষের মিষ্টি

মিষ্টির জগতে রাজশাহীবাসীর কাছে বিশেষ করে রাজশাহী কোর্ট অঞ্চলে সবচাইতে পরিচিত নাম হোবা ঘোষের মিষ্টি। রাজশাহীর ছোট বড় সকলেই মিষ্টির ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দে রাখেন হোবা ঘোষকে। মিষ্টি সংগ্রহের জন্য আপনাকে আসতে হবে রাজশাহী কোর্ট চত্বরে। রাজশাহীর কোর্ট শহীদ মিনারের পাশে একেবারেই ছোট্ট একটি পরিবেশে কয়েকটি বেঞ্চ নিয়ে দোকান হোবা ঘোষের।
দোকানে আপনি পাউরুটি এবং মিষ্টি দিয়ে খুব সহজেই মাত্র ২৫ থেকে ৩০ টাকায় আপনার নাস্তা সম্পন্ন করতে পারবেন্। হোবা ঘোষের মিষ্টি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রায় ৬৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই দোকানটি বর্তমানে হোবা ঘোষের দুই ছেলের দ্বারা পরিচালিত হয়।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা যে সকল খাবারের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী-রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার কোনগুলো সে সম্পর্কে জানলাম। আমরা আপনাদের সামনে কালাই এর রুটি এবং বেগুন ভর্তা,সিটি হাটের কালা ভুনা,মড়মড়িয়া হাটের হাঁসের মাংস,সিএনবি মোড়ের গরম মিষ্টি,নিউ মার্কেটের ভাংচুর বার্গার,বর্ণালীর চা,আলুপট্টির ফুচকা,বাটার মোড়ের জিলাপি,হোবা ঘোষের মিষ্টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।

 আশা করি যে সকল খাবারের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী - রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার কোনগুলো এ সংক্রান্ত আপনারা আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন এরকম প্রয়োজনী আরো পোস্ট করতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং গুগল নিউজে আমাদের পেজটিতে ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা