MTFE কী কিভাবে সর্বশান্ত লাখো এমটিএফই গ্রাহক

    

MTFE হাজার কোটি টাকা চুরি করে বাংলাদেশের এখন আলোচিত নাম এমটিএফই। অল্প টাকা বিনিয়োগে বেশি লাভের আশায় কিংবা রাতারাতি বড় লোক হওয়ার জন্য অনেকেই এমটিএফই গ্রাহক হয়েছেন। কিন্তু MTFE হাজার কোটি টাকা চুরি করে সর্বশান্ত করেছে লাখো এমটিএফই গ্রাহক কে।
MTFE হাজার কোটি টাকা চুরি সর্বশান্ত লাখো এমটিএফই গ্রাহক
আজকে আমরা এই প্রতারক কোম্পানি MTFE হাজার কোটি টাকা চুরি কিভাবে করল এবং এ সম্পর্কে বিস্তারতি জানবো।

ভূমিকা

এমটিএফই একটি ট্রেডিং প্লাটফর্ম । যার মাধ্যমে এমটিএফই গ্রাহক বিট কয়েন বা ক্রিপ্টো কারেন্সি দিয়ে লেন-দেন করতেন। ক্রিপ্টো কারেন্সি বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কথায় আছে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু বা অতি লোভে তাঁতি নষ্ট । রাতারাতি বড় লোক হওয়ার নেশায় অনেকেই লোন নিয়ে অনেকেই আবার অনেকেই জমি বন্ধক রেখে বিনিয়োগ করে এখন পথের ফকির।

MTFE কী?

MTFE হচ্ছে- Metavers Foreign Exchange Group নামের একটি ট্রেডিং প্লাটফর্ম। মূলত ক্রিপ্টে কারেন্সি বা বিটকয়েন এর মাধ্যমে এখানে লেনদেন করা হয়ে থাকে।MTFE নামক এ্যাপসের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হত। এর নিদিষ্ট কোন অফিস নেই। প্রতিষ্ঠানটি কানাডিয়ান এবং এশিয়াই মাসুদ আল আল ইসলাম নামের একজন বাংলাদেশী দুবাইয়ে বসে এর দেখাশোনা করতেন।

MTFE সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশে এমটিএফই গ্রাহক কত তার বিস্তারিত কোন তথ্য নেই তবে ধারণা করা হয় এ সংখ্যাটি ৪০ লাখের উপরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে কোম্পানিটি। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে কোম্পানির কোন অফিস না থাকলেও গ্রাহক সংখ্যা কিভাবে এত হল। উত্তরটি খুবই সহজ এমটিএফই মূলত কাজ করেছে ডেসটিনি স্টাইলে । 

এখানে প্রথম হাত দ্বিতীয় হাত তৃতীয় হাত এইভাবে কোম্পানির সম্প্রসারণ ঘটেছে কেউ তার নিচে ১০০ জনকে কোম্পানি ঢুকাতে পেরেছে তাহলে তাকে কোম্পানির সিইও দেখানো হয়েছে। যে ব্যাক্তি সিইও হবেন তাকে মাসে তিন লক্ষ টাকা বেতন এবং ১ লক্ষ টাকা প্রদান করা হবে অফিস ভাড়ার জন্য। বাংলাদেশে প্রায় ৩৫০ অধিক সিইও রয়েছে এই কোম্পানিতে। সিইওরা সাধারণ মানুষদের সহজেই ধনী হবার লোভের ফাদে ফেলে এমটিএফই গ্রাহক বানিয়েছে। 


২০১৬ সালে কানাডার সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা শুরু করে MTFE। পরবর্তীতে তারা অস্ট্রেলিয়ার সরকারের কাছ থেকেও ব্যবসায়িক লাইসেন্স পায়। এই দুইটি লাইসেন্স ব্যবহার করেই মূলত খুব সহজেই সাধারণ মানুষকে লোভের ফাদে ফেলেছে

MTFE কিভাবে কাজ করে

এমটিএফই গ্রাহকদের ফাদে ফেলার জন্য ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিমাসে ২০০-৩০০ এর অধিক সেমিনার আয়োজন করা হতো । এসব সেমিনারের উদ্ধেশ্যই সাধারণ মানুষকে যুক্ত করা। পুরাদেশে প্রায় ৪০ লাখের অধিক মানুষকে এভাবেই ফাদে ফেলেছে এমটিএফই । অ্যাপের মাধ্যমে একাউন্ট খুলার পর বাইন্যান্স এর মাধ্যমে ডলার কিনে বিনিয়োগ করা হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১ টা পর্যন্ত ট্রেডিং এর সময় থাকে।

প্রতিটি সিইও এর নিজস্ব হোয়্যাটসএপ, টেলিগ্রাম গ্রুপ রয়েছে। সিইও রা এ সময় তাদের মেম্বারদের ট্রেডিং করতে সিগন্যাল দেয়। মেম্বার রা সে সময় ট্রেডিং করে থাকেন, ট্রেডিং মানে বিনিয়োগ।যখন লাভ হতো তখন ডলার বৃধ্ধি পেত লস হলে ডলার কমে যেত।

MTFE হাজার কোটি টাকা চুরি কিভাবে করল

৬১ ডলার মানে প্রায় ৬০০০ টাকা থেকে বিনিয়োগ শুরু হয় MTFE তে। ৬০০০ টাকায় প্রতিমাসে ৩০০ টাকা লাভ দেয় MTFE । সে জন্য অনেকে লক্ষ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে এখন পথে বসে গেছেন। এভাবেই কোম্পানি প্রায় ২ মিলিয়ন ডলান হাতিয়ে নিয়েছে। সারা দেশে MTFE সিইও দের ৩০০-৪০০ অফিস রয়েছে যেগুলো এখন সবগুলোই বন্ধ। 


সাধারণ গ্রাহকরা সিইও হয়ার জন্য যত পেরেছে মেম্বার বৃদ্ধি করেছে কারণ তাদের লোভ দেখানো হয়েছে সিইও হতে পারলে মাসে তিন লক্ষ টাকা বেতন এবং ১ লক্ষ টাকা প্রদান করা হবে অফিস ভাড়ার জন্য। এই লোভেই এক এক করে মেম্বার বেড়েছে MTFE এর। যাদের মাধমে তারা ১১০০০ কোটি টাকা চুরি করতে পেরেছে। MTFE এর ৯৫% বিনিয়োগকারীই বাংলাদেশী। 

গত ৭ আগষ্ট থেকে অ্যাপস আপডেট অযুহাত দেখিয়ে এমটিএফই গ্রাহকদের টাকা উত্তলণ বন্ধ করে দেয় এমটিএফই । কিন্তু ১০ দিনেও তাদের আপডেট শেষ হয় নি। সর্বশেষ ১৭ আগষ্ট রাত ১২টার পর ট্রেডিং এর নামে লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের ২ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলে।

এমটিএফই গ্রাহক কী টাকা ফেরত পাবেন

MTFE হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে এটা জানার পরই এমটিএফই গ্রাহকদের যে টাকা ফেরত পাবার কোন ধরনের সম্ভাবনা নেই তা তারা বুঝতে পেরেছেন। কারণ না আছে তাদের নির্দিষ্ট কোন অফিস না আছে কোন অফিস আর না আছে সরকারের কোন অনুমোদন। তারা কার কাছে অভিযোগ করবেন আর কে বা তাদের সমাধান দিবেন কিছুই তারা জানেন না। 

তবে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এটি নিয়ে তদন্তে নেমেছেন কিন্তু তাদের কাছে এখনো কেউ অভিযোগ করেন নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয় এর সঠিক তদন্ত করা।

চোরের মায়ের বড় গলা

যেসকল এমটিএফই গ্রাহকরা বিনিয়োগ করেছিলেন তাদের সবার একাউন্ট শুধু ফাকাই করা হয় নি সবার একাউন্টেই ব্যালেন্স মাইনাস দেখানো হয়েছে । কারো ৫০০ ডলার তো কারো হাজার ডলার। এমটিএফই গ্রাহকদের আবার নোটিশ দেয়া হয়েছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডলার ফেরত না দেয়া হলে MTFE তার গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থ গ্রহণ করবে। একেই বলে চোরের মায়ের বড় গলা।

ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল প্রতারণা

বাংলাদেশীরা এর আগে ডেসটিনি, হলমার্ক এরমাধ্যমে প্রতারিত হয়েছিল তখন ছিল হাতে হাতে কার্যক্রম কিন্তু এখন ডিজিটাল যুগে মানুষ প্রতারণার শিকার হল ডিজিটাল অ্যাপস MTFE দিয়ে। MTFE হাজার কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে গেল অর্থাৎ প্রতারণার ধরণ একি আছে শুধু পদ্ধতিটাই পাল্টিয়েছে প্রতারক চক্র তবু মানুষের রাতারাতি বড়লোক হওয়ার না স্বপ্ন পূরন হল আর না ইচ্ছে।

লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা নতুন ডিজিটাল চক্র MTFE সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।MTFE হাজার কোটি টাকা চুরি কিভাবে করছে , লাখো এমটিএফই গ্রাহক এর ভবিষ্যৎ কি ইত্যাদি আমরা তুলে ধরেছি।  আশা করব এসকল প্রতারক চক্র থেকে সাবধান থাকবেন। 

পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবি-কাঠি। আপনি যদি ধনী হতে চান পরিশ্রম করুণ সফলতা আসবেই আর যদি রাতারাতি বড় লোক হতে চান তাহলে হয়ত নতুন প্রতারক চক্র আপনার অপেক্ষায়। এ রকম সচেতনতা মূলক আরো পোষ্ট পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা