খোলাফায়ে রাশেদীন বা চার খলিফা ১ম পর্ব আবু বকর (রাঃ) -উমর(রাঃ)

   

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ মৃত্যুবরণ করার পর মুসলিম বিশ্বের খেলাফত বা নেতৃত্ব যে চারজন বিশিষ্ট সাহাবী গ্রহণ করেছিলেন তাদেরকে বলা হয় খোলাফায়ে রাশেদীন বা চার খলিফা। আজকে আমরা খোলাফায়ে রাশেদীন বা চার খলিফা এর ১ম পর্বে আবু বকর (রাঃ)-উমর(রাঃ) সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
খোলাফায়ে রাশেদীন বা চার খলিফা  আবু বকর (রাঃ)  উমর(রাঃ)
প্রিয় নবী সাঃ ইন্তেকালের পর মুসলিম বিশ্ব যখন নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে তখন সকল সাহাবীদের পরামর্শে হযরত আবু বকর (রাঃ) ইসলামিক খেলাফত গঠন করেন।৬৩২ খ্রি. শুরু হওয়া খোলাফায়ে রাশেদীনদের শাসনকাল ৬৬১ সাল পর্যন্ত। 

খোলাফায়ে রাশেদীন বা চার খলিফা সম্পর্কে জেনে নিনঃ ভূমিকা

মুসলিম বিশ্ব কখনোই নেতৃত্ব শূন্য ছিল না। মহানবী সাঃ তার যোগ্য সাহাবাদের রাজনীতি, অর্থনীতি সমাজনীতি, কূটনীতি, যুদ্ধ কৌশল সকল বিষয়ে পারদর্শী করে গড়ে তুলেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে তার মৃত্যুর পর যখন মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বশূন্য হওয়ার পথে ঠিক তখনই মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তার সবচাইতে যোগ্য সাহাবী হযরত আবু বকর (রাঃ)। ৬৩২ সালে শুরু হওয়া খেলাফত  ১৯২৩ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল।

খোলাফায়ে রাশেদীন বা চার খলিফা সম্পর্কে জেনে নিনঃ আবু বকর(রাঃ)

মুসলিম বিশ্বের ১ম আমিরুল মুমিনীন বা খলিফা ছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ)। তিনি মক্কার কুরাইশ বংশের বনু তাইম গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ছিলেন। মুহাম্মদ (সা.) ইসলাম প্রচার শুরু করলে আবু বকর (রাঃ) সহজেই এবং নির্দ্বিধায় ইসলাম কবুল করেন। তিনি বিশ্বনবী (সা.) বাল্যবন্ধু এবং শ্বশুর ছিলেন।

আবু বকর (রাঃ): সিদ্দিক উপাধী প্রাপ্তি

মুহাম্মদ (সা.) মেরাজের ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করলে কাফেররা তা নিয়ে উপহাস শুরু করে। তারা তাকে পাগল, জোতিষী ইত্যাদি বলা শুরু করে। আবু বকর (রাঃ) সব শুনে নিঃসংকোচে বিশ্বাস করেন। তার বিশ্বস্ততায় মুগদ্ধ হয়ে তাকে সিদ্দিক উপাধী দেন। সিদ্দিক অর্থ বিশ্বস্ত

আবু বকর (রাঃ): বাল্যকাল এবং শৈশব

অন্যান্য আরব শিশুদের মত আবু বকর (রাঃ) এর শৈশব ও ছিল সাদামাটা । তার পিতা আবু কুহাফা বনু তাইম গোত্রর নেতা ছিলেন। তিনি তার পিতার মতই নেতৃত্বের অধীকারি ছিলেন। মাত্র ১০ বছর বয়সেই পিতার সাথে তার ব্যবসায়ে হাতে খড়ি। ঐ সময়ে আরবে যে কয়েকজন ধণী ব্যবসায়ি ছিলেন আবু বকর (রাঃ) তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।অন্যান্য আরব শিশুদের মত হলেও আবু বকর (রাঃ) শিক্ষিত ছিলেন। কাব্য সাহিত্য ও বংশ তালিকা বিদ্যায় ছোট থেকেই তিনি পারদর্শী ছিলেন।

আবু বকর(রাঃ): ইসলাম গ্রহণ এবং পরবর্তী জীবন

আবু বকর(রাঃ) ছিলেন প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী পুরুষ। তার ইসলাম গ্রহণ আরবের চিত্র বদলে দেয়। তার একান্ত চেষ্টা এবং পরীশ্রমে উসমান(রাঃ), তালহা (রাঃ) ,যুবায়ের(রাঃ) , সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) , আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) আবু উবায়দা(রাঃ) এর মত বিশিষ্ট সাহাবীরা ইসলাম গ্রহণ করেন। এসকল সাহাবীরা পরবর্তীতে ইসলামের প্রচার,প্রসার এবং বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। 


আবু আবু বকর(রাঃ) অনেক ধনী ছিলেন তিনি বিলাল (রাঃ) আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) এর মত সাহাবীদের দাসত্ব থেকে মুক্তিদান করেন। তিনি তার কন্যা আয়েশা রা. এর সাথে নবী(সা.) এর বিবাহ দেন। তার এসব কর্মকান্ড কাফিরদের মধ্যে আতংক তৈরী করে। মহানবী (সা.) এর সাথে তাকেও শিয়াবে আবু তালিবে বন্দী করে রাখা হয়। শিয়াবে আবু তালব থেকে মুক্ত হওয়ার পর তিনি মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে মদিনায় হিজরত করেন। 

মদীনায় যাবার পথে মুহম্মদ (সা.) তাকে নিয়ে সাত্তর গুহায় আশ্রয় নেন। যার কারণে তাকে নবী(সা.) এর গুহার সঙ্গী বলা হয়। তিনি বদর,ওহূদ, খন্দক, মক্কা বিজয়, হুনায়ন, তায়েফ এর যুদ্ধ, তাবুক অভিযান সহ সকল অভিযানে মুহাম্মদ(সা.) এর সাথে অংশগ্রহণ করেন। তাবুক যুদ্ধে তিনি তার সকল সম্পত্তি ইসলামের পথে দান করে দেন।

আবু বকর(রাঃ): মুহম্মদ (সা.) এর মৃত্যু এবং খলিফা আবু বকর (রাঃ)

মুহম্মদ (সা.) ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করলে সকল সাহাবীদের পরামর্শে খোলাফায়ে রাশেদীন এর ১ম খলিফা হিসেবে হযরত আবু বকর (রাঃ) মুসলিম বিশ্বের খেলাফতের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুহম্মদ (সা.) ইন্তেকাল করলে মুসলিম বিশ্ব বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়। অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসনের জন্য তাকে যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে , মিথ্যা নবীর দাবিদার মুসাইলামাতুল কাজ্জাব, সাজাহ, তুলায়হার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যুদ্ধ করতে হয়েছে।

আবু বকর রা. কঠোর হস্তে সকল বিশৃঙ্খলা দমন করে মুসলিম বিশ্বে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসন পর তিনি খেলাফত সম্প্রসারণ মনোযোগ দেন । খলিফার নির্দেশে ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাপতি হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রা. পারস্য এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অনেকগুলো সফল অভিযান পরিচালনা করেন। 

এ সকল অভিযানের ফলে মুসলিম বিশ্বের আয়তন মক্কা মদিনা থেকে সম্প্রসারিত হয়ে আবু বকর রাঃ এর আমলে বর্তমান সৌদি আরব, ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক, ইরান সহ প্রায় পুরো আরব অংশে সম্প্রসারিত হয়। এই সকল যুদ্ধের মধ্যে ইয়ামামার যুদ্ধে ৭০ জন হাফেজে কোরআন শাহাদাত বরণ করেন।

এরপর উমর (রাঃ) এর পরামর্শে হযরত আবু বকর (রাঃ) প্রধান ওহী লেখক হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) কে পবিত্র কুরআন শরীফ সংকলনের নির্দেশ দেন। আবু বকর রা. মোট ২ বছর ৩ মাস ক্ষমতায় ছিলেন এর মধ্যে অধিকাংশ সময়ই কেটেছে যুদ্ধ বিগ্রহের মধ্য দিয়ে । তিনি সকল সমস্যা দূর করে খেলাফতকে একটি শক্ত ভিতের উপর দাড় করান।

আবু বকর(রাঃ): মৃত্যু এবং পরবর্তী খলিফা মনোয়ন

৬৩৪ খ্রি. আবু বকর রা. ইন্তেকাল করেন। মারা যাওয়ার পূর্বেই তিনি বিশিষ্ট সাহাবীদের পরামর্শে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) কে পরবর্তী খলিফা মনোয়ন দিয়ে যান। তাকে মদিনায় মহানবী (সা.) এর পাশে দাফন করা হয়।

খোলাফায়ে রাশেদীন বা চার খলিফা সম্পর্কে জেনে নিনঃ উমর(রাঃ)

খোলাফায়ে রাশেদীনের ১ম খলিফা আবু বকর (রা.) ইন্তেকাল করলে খলিফা হন হযরত উমর (রাঃ)। তিনি ৬৩৪ সাল থেকে ৬৪৪ সাল পর্যন্ত মোট ১০ বছর শাসন করেন। তিনি তার দক্ষতা, মহানুভবতা, সাহস,শৌর্য,বীর্যের মাধ্যমে অর্ধ পৃথিবী ব্যাপি মুসলিম শাসন সম্প্রসারণে সক্ষম হন। মুহাম্মদ সা. যে ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার রূপরেখা দেখিয়ে গেছিলেন তার প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন উমর (রাঃ)। তিনি সম্পর্কে দিক থেকে মহানবী সাঃ এর শ্বশুর ছিলেন।

উমর(রাঃ): জন্ম এবং ইসলাম পূর্ব জীবন

উমর (রাঃ) কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল খাত্তাব।খাত্তাব সেই সময় বনু আদি গোত্রের বিরোধ মীমাংসা কারী ছিলেন। খাত্তাব একজন কঠোর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তিনি ওমরকে দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করাতেন।  উমর (রাঃ) অল্প বয়সে লিখতে ও পড়তে শেখেন তিনি কৈশরেই মল্লযুদ্ধ, অশ্বারোহন, সমরবিদ্যা, অস্ত্র-পরিচালনা, তীরান্দাজি ইত্যাদি শিখেছিলেন।

ব্যক্তিগতভাবে উমর (রাঃ) ছিলেন খুবই শক্তিশালী একজন মানুষ, তৎকালীন আরবে কুস্তিগীর হিসেবে তার ব্যাপক নাম ডাকছিল । পিতার মৃত্যুর পর তিনি তার গোত্রের বিরোধ মীমাংসা কারী হন। তিনি খুব ভালো বক্তব্য দিতে পারতেন।

উমর(রাঃ): ইসলাম গ্রহণ

মহানবী (সা.) ইসলাম প্রচার শুরু করলে অন্যান্য আরব নেতাদের মত উমর (রাঃ) ইসলামের কট্টরবিরোধী ছিলেন। তিনি মহানবী (সা.) হত্যা করার সংকল্প করেছিলেন। সিরাতে ইবনে হিশামে বর্ণিত আছে মহানবী (সা.)র দুইজন ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন একজন ছিলেন উমর (রাঃ) অন্যজন ছিলেন আবু জেহেল।  মহান আল্লাহতালা উমর (রাঃ)কে ইসলামের জন্য কবুল করেন।

উমর (রাঃ) একদিন খবর পেলেন মুহম্মদ (সা.) দ্বারে আরকামে সাহাবীদের নিয়ে বসে আছেন তিনি তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সেখানে রওনা দেন। পথিমধ্যে জানতে পারেন তার বোন এবং জামাতা ইসলাম গ্রহণ করেছেন। উমর (রাঃ)  বিষয়টিতে কষ্ট পেয়ে তার বোনের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তিনি সেখানে গিয়ে তাদের মারধর করলে তারা ইসলাম গ্রহণের কথা স্বীকার করেন।

তারা তাকে সূরা তোহা পড়তে দেন। এই সূরা পড়ার ফলে তার মনের পরিবর্তন ঘটে তিনি পুনরায় মুহম্মদ (সা.)  এর উদ্দেশ্যে রওনা দেন সাহাবীরা ওমরকে দেখে ভয় পেয়ে যান এবং মুহাম্মদ (সাঃ) কে বিষয়টি জানান।মুহাম্মদ (সাঃ) তাদেরকে বলেন তোমরা উমর (রাঃ) কে আসতে দাও উমর (রাঃ)  সেখানে আসার পরে ইসলাম কবুলের কথা ঘোষণা দেন।

উমর(রাঃ): ফারুক উপাধি প্রাপ্তি

উমর (রাঃ)  ইসলাম গ্রহণের পূর্বে সাহাবীরা গোপনে ইবাদত করতেন। তারা হযরত আকরাম (রাঃ) এর বাড়ি দ্বারে আরকামে একত্রিত হতেন এবং মুহম্মদ (সা.)  এর কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় জানতেন এবং এবাদত বন্দেগী করতেন। 


ইসলাম গ্রহণের পর উমর (রাঃ)  ঘোষণা দেন যে এখন থেকে মুসলমানরা আর লুকিয়ে থাকবে না বা গোপনে এবাদত করবে না এখন থেকে মুসলমানরা প্রকাশ্যে ইবাদত করবে।  তার এই ঘোষণার পর মুসলমানরা প্রকাশ্যে ইবাদত করা শুরু করে এবং নবী (সা.) এতে খুশি হয়ে তাকে ফারুক উপাধি দেন ফারুক অর্থ সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী।

উমর(রাঃ): ইসলাম পরবর্তী জীবন

উমর (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণ আরবে ব্যাপক প্রভাব ফেলে তিনি একাধারে খুব সাহসী, বিচক্ষণ, বদমেজাজি এবং রগচটা লোক ছিলেন। তার বিপক্ষে কথা বলার মত সাহস আরবের খুব কম মানুষেরই ছিল। তার ইসলাম গ্রহণের ফলে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মক্কায় যখন কাফেরদের অত্যাচার প্রচন্ড আকার ধারণ করে তখন তিনি অন্যান্য সাহাবাদের মত মদিনায় হিজরত করেন।

তবে অন্যান্য সাহাবীরা যেখানে গোপনে হিজরত করেছিলেন উমর (রাঃ)  সেখানে প্রকাশ্যে হিজরত করেন। মুসলমানদের এই হিজরত কে স্মরণীয় করে রাখতে আরবিতে হিজরী সালের প্রবর্তন করা হয়। এই হিজরী সালের প্রবর্তক ছিলেন উমর ফারুক (রাঃ)  । উমর (রাঃ)  মুহাম্মাদুর রাসুল (সা.) এর সাথে বদর যুদ্ধ, ওহুদ যুদ্ধ, খন্দক যুদ্ধ, খাইবার যুদ্ধ, মক্কা বিজয়, হুনায়নের যুদ্ধ, তাবুক যুদ্ধ এবং বিদায় হজে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

মুহম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর আবু বকর (রাঃ)  খলিফা হলে তিনি তাকে সকল রকমের সহযোগিতা এবং সমর্থন প্রদান করেন। আবু বকরে (রাঃ) এর সময় ইয়ামামার যুদ্ধে ৭০ জন হাফেজে কোরআন শহীদ হলে উমর (রাঃ) এর পরামর্শেই আবু বকর (রাঃ) কোরআন সংকলনের উদ্যোগ নেন যেটি আবু বকরের মৃত্যুর পর উমর (রাঃ)  কাছে সংরক্ষিত ছিল।

উমর(রাঃ): আবু বকরের মৃত্যু এবং খলিফা ওমর

৬৩৪ সালে আবু বকর  (রাঃ) মৃত্যু বরণ করার পূর্বে উমর (রাঃ) কে খলিফা হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে যান। যদিও উমর (রাঃ) এর কঠোরতার জন্য অনেকেই তাকে খলিফা হিসেবে মেনে নিতে চাননি তবুও পরবর্তীতে সকলেই তাকে খলিফা হিসেবে মেনে নেন। ইচ্ছাশক্তি, রাজনৈতিক সচেতনতা, নিরপেক্ষতা ন্যায়বিচার, বুদ্ধিমত্তা, একাগ্রতা, খোদাভীতি, সততা, নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতা দিয়ে তিনি ছোট্ট একটি ইসলামী সাম্রাজ্যকে অর্ধ পৃথিবী ব্যাপী বিস্তৃত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

প্রথম মুসলিম শাসক হিসেবে তিনি মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করেন উমর (রাঃ)  তৎকালীন সময়ের শক্তিশালী পারস্য সাম্রাজ্য এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিশাল একটি অংশ ইসলামী সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসেন। তার শাসনামলেই পারস্য সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে। উমর (রাঃ)  প্রায় ৩৫ হাজার দুর্গ জয় করেছিলেন। 

পৃথিবীর ইতিহাস বদল করে যে সকল যুদ্ধ রয়েছে তাদের মধ্যে ইয়ারমুক  এবং কাদিসিয়ার যুদ্ধ অন্যতম। উমর (রাঃ) র দক্ষ নেতৃত্বে মুসলমানরা এসকল যুদ্ধে জয়লাভ করেন।  উমর (রাঃ)  সমগ্র সাম্রাজ্যকে ৭টি প্রদেশ এবং প্রায় ১০০ জেলায় ভাগ করে সে সকল জেলায় বেসামরিক প্রশাসন তৈরি করে শাসন কার্য পরিচালনা করেন।


তিনিই প্রথম পুলিশ বাহিনীর গোড়াপত্তন করেন, কারাগারের ধারণা প্রথম প্রবর্তন করেন উমর (রাঃ) । প্রশাসনিক কাঠামোকে সচল রাখার জন্য তিনি প্রধান সচিব, সামরিক সচিব, পুলিশ প্রধান, কোষাধক্ষ্য, প্রধান বিচারপতি, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইত্যাদি নিয়োগ দেন। যার ফলে সমগ্র সাম্রাজ্যে শৃঙ্খলা এবং ন্যায় বিচার বজায় থাকত। এত বড় সাম্রাজ্যের প্রধান হয়ে ওমর খুব সাদামাটা জীবন যাপন করতেন।

জনগণের কষ্ট লাঘবের জন্য তিনি গভীর রাতে আটার বস্তা কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন এবং জনগণের সার্বিক অবস্থা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতেন। উমর (রাঃ)  বলতেন, “দাজলা এবং ফোরাতের তীরে যদি কোন বিড়ালও না খেয়ে মারা যায় তাহলে তার জন্য আমি উমর (রাঃ) কে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে।”

উমর ফারুক (রাঃ) ন্যায় বিচারের দিক দিয়েও খুব কঠোর ছিলেন। তিনি মদ্যপানের অভিযোগে তার নিজ সন্তানকে আশিটি বেত্রাঘাতে নির্দেশ দেন চল্লিশটি বেত্রাঘাতের পর তার পুত্র আবু শাহামা  ইন্তেকাল করেন। পরবর্তীতে তার কবরের উপর বাকি ৪০ টি বেত্রাঘাত করা হয়।

উমর(রাঃ): মৃত্যু এবং পরবর্তী খলিফা মনোনয়ন

আবু লুলু নামে একজন পার্শিয়ান নামাজরত অবস্থায় হযরত উমর (রাঃ)এর উপর আক্রমণ করে। আক্রমণের ০৩ দিন পর ৬৪৪ সালে উমর (রাঃ) ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পূর্বেই তিনি ৬ জন বিশিষ্ট সাহাবীকে মনোনয়ন দিয়ে যান পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের জন্য। এই ৬ জন সাহাবীর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পরবর্তী খলিফা হিসেবে উসমান (রাঃ)  এর নাম ঘোষণা করা হয় উমর (রাঃ)কে মুহম্মদ (সাঃ) এবং আবু বকরের পাশে দাফন করা হয়।

লেখকের শেষ কথা

আজকে আমরা খোলাফায়ে রাশেদীন  বা চার খলিফা এর ১ম পর্বে আবু বকর (রাঃ) -উমর(রাঃ) সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম।  আবু বকর  (রাঃ), ওমর (রাঃ) এর জন্ম, শৈশব, ইসলাম পূর্ব জীবন, ইসলাম পরবর্তী জীবন, খিলাফতকালীন ইতিহাস এবং মৃত্যু সম্পর্কে আজকে আমরা আলোচনা করলাম। 

খোলাফায়ে রাশেদীন এর ২য় পর্বে উসমান (রাঃ) এবং আলী (রাঃ) সম্পর্কে বিস্তারিত  আলোচনা করা হবে। আশা করি আজকের আলোচনাটি আপনাদের ভাল লেগেছে। এরকম আরো তথ্য বহুল এবং ইতিহাস নির্ভর তথ্য জানতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার অনুরোধ রইল।ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা