নাইজার ইকোয়াস সংঘাত এবং নাইজারের সামরিক শক্তি

পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম প্রধান একটি দেশ নাইজার। ক্ষমতার  দন্দে নাইজার ইকোয়াস এখন মুখোমুখি। ইকোয়াস  পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর সংগঠন। নাইজার ইকোয়াস সংঘাত এর দিকে তাকিয়ে আছে সমগ্র বিশ্ব। যে কোন সময় শুরু হতে পারে ভয়াবহ যুদ্ধ  এই নাইজার ইকোয়াস সংঘাত  কে কেন্দ্র করে।

নাইজার ইকোয়াস সংঘাত  এবং  নাইজারের সামরিক শক্তি
আজকে আমরা জানবো নাইজার ইকোয়াস সংঘাত এর কারণ, ঘটনার সূত্রপাত,এবং এর ফলাফলই বা কি হতে পারে এবং নাইজারের সামরিক শক্তি।

সূচিপত্রঃ নাইজার ইকোয়াস সংঘাত  এবং  নাইজারের সামরিক শক্তি

নাইজার সম্পর্কে খুটিনাটি তথ্য

নাইজার একটি দরিদ্র প্রধান পশ্চিম আফ্রিকান মুসলিম দেশ। এটি স্থলবেষ্টিত বৃহৎ  আফ্রিকান দেশ।আরজেরিয়া, বেনিন, লিবিয়া, মালি ও বুর্কিনা ফ্যাসো দ্বারা স্থলবেষ্টিত দেশটি। ১২ লক্ষ ৬৬ হাজার ব.কি আয়াতনের বিশাল এই দেশটির রাজধানী নিয়ামে। নিচে নাইজারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়া হলঃ

  • নামকরণ- নাইজার নদীর নামানুসারে।
  • রাজধানী-নিয়োমে
  • বৃহত্তম শহর -নিয়ামে
  • ভাষা - ফরাসী
  • মুদ্রার নাম - ফ্রাঙ্ক
  • ধর্ম- ইসলাম
  • জনসংখ্যা- প্রায় ২ কোটি
  • মাথাপিছু আয়- ৪০৯ মার্কিন ডলার
  • সরকার প্রধান- আব্দুর রহমান চিয়ানী
  • সময় অঞ্চল- +01.00( ইউটিসি)
  • ডায়ালিং কোড- +227

 ইকোয়াস কী?

পশ্চিম আফ্রিকার ১৫ টি দেশের সংগঠন ইকোয়াস। ১৯৭৫ সালে গঠিত সংগঠনটির  সদস্যরা হচ্ছে-

  1. ঘানা
  2. বুর্কিনা ফ্যাসো
  3. গিনি
  4. গাম্বিয়া
  5. গিনি-বিসাউ
  6. বেনিন
  7. কেপ ভার্দে 
  8. লাইবেরিয়া
  9. মালি
  10. নাইজার
  11. টোগো
  12. আইভরিকোষ্ট
  13. সেনেগাল
  14. নাইজেরিয়া
  15. সিয়েরা লিওন

নাইজার ইকোয়াস সংঘাত  সূত্রপাত যেভাবে

নাইজারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন পশ্চিমা মদদপুষ্ট শাসক মোহাম্মদ বাজুম। ২৬ জুলাই সামরিক অভুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন আব্দুর রহমান চিয়ানী। পশ্চিমা বিশেষ করে ফ্রান্স একচেটিয়াভাবে এই এলাকার স্বর্ণের খনিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। আফ্রিকার এসকল দেশ কাগজে কলমে দরিদ্র হলেও এদের রয়েছে সোনা,রূপা, হিরা ,ইউরোনিয়াম, কপার এর বিশাল ভান্ডার। 

আরো পড়ুনঃMTFE হাজার কোটি টাকা চুরি সর্বশান্ত লাখো এমটিএফই গ্রাহক 

ফ্রান্স এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা এসকল সম্পদ চুরি করে নিয়ে গিয়ে েনিজ দেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। কিন্তু নাইজারের সাধারণ জনগন এত সম্পদ থাকার পরেও দারিদ্র সিমার নিচেই বাস করে। বিশ্বের ১০ দরিদ্র দেশ এই দেশটি। পশিচমাদের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধেই মূলত বিদ্রোহ করে নাইজার সেনাবাহিনী। 

সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পর তাদের ক্ষমতা ছাড়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিল পশ্চিমা মদদপুষ্ট জোট ইকোয়স। কিন্তু সেনাবাহিনী ক্ষমতা না ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইকোয়াস। 

নাইজারের সামরিক শক্তি

নাইজারের সেনাবাহিনী দুটি ভাগে বিভক্ত সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনী। নাইজার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ হওয়াই এদের কোন নৌবাহিনী নেই এবং নৌবাহিনীর প্রয়োজনও নেই।
নাইজারের সেনাবাহী
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপার্ট অনুযায়ী নাইজার বিশ্বের ১১৯ তম শক্তিশালী দেশ। সামরিক বাজেট ২৮৭ বিলিয়ন ডলার। মোট সক্রিয় সেনাসদ্য রয়েছে ১৩০০০। কোন রির্জাভ সৈন্য নেই নাইজারের। প্যারামিলিটারি রয়েছে ৩০০০ জন। কোন যুদ্ধ ট্যাংক, রকেট লাঞ্চার, কামান নেই। সৈন্য পরিবহনের জন্য এপিসি-৭৩০ টি এছাড়া তাদের অন্য কোন যানবাহন নেই।
নাইজারের বিমানবাহিনী
 নাইজারের বিমানবাহিনী বিশ্বের অন্যতম দুর্বল বিমান বাহিনী। এই বাহিনীতে মোট ০৭ টি বিমান রয়েছে।তার মধ্যে   যুদ্ধ বিমান-০২ টি, সৈন্য পরিবহনের জন্য  ট্রান্সপোর্ট বিমান -০৫ টি। হেলিকাপ্টার রয়েছে মোট -০৮ টি এর মধ্যে জরুরী কাজে ব্যবহারের জন্য সাধারণ হেলিকপ্টার-০৭ টি । তবে মজার বিষয় বাংলাদেশের মত যেখানে কোন এ্যাটক হেলিকাপ্টার নেই সেখানে নাইজারের মত দেশের ০১ টি এ্যাটাক হেলিকাপ্টার রয়েছে। 

নাইজার ইকোয়াস সংঘাত এর ফলাফলই বা কি

নাইজার ইকোয়াস সংঘাত এর ফলাফল একটি সূদূরপ্রসারী ঘটনার জন্ম দিবে এই এলাকাই। বিশেষ করে এই অঞ্চলের সার্বিক জন-জীবন বিপর্যস্ত হবে।নাইজারের সাথে মালি এবং বুরকিনা ফ্যাসো একাত্মতা ঘোষণা করে ইতিমধ্যেই যুদ্ধ বিমান পাঠিয়েছে। নাইজারের রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধাদল ওয়াগনারের ও উপস্থিতি রয়েছে। 
অন্যদিকে ইকোয়াসের সাথে রয়েছে ফ্রান্স আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদ। নাইজার ইকোয়াস সংঘাত শুরু হলে সেটি আঞ্চলিক এবং বৈশিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। বিশ্ব হয়তো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর আরেকটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ দেখতে পাবে।

পশ্চিমাদের স্বার্থ কার দিকে?

পশ্চিমারা বরাবরই গনতন্ত্রের ফেনা তুলে বরাবরই নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যাস্ত। এখানেও তার ব্যাতয় ঘটেনি। ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া,ইয়েমেন, ইউক্রেন এর মত এখানেও পশ্চিমা জোট নিজেদের স্বার্থে ইকোয়াসকেই সমর্থন দিবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। নাইজারের সাধারণ জনগন সেনাবাহিনীর সমর্থনে মিছিল করছে, সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিতে নিজেদের নাম লিখিয়েছে। 

তারা নিজ দেশের সম্পদ রক্ষায় প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। তবুও পশ্চিমারা গণতন্ত্রের বুলি আওরিয়ে যে ইকোয়াস কে সমর্থন দিবে এতে কান সন্দেহ নেই। তবে নাইজারকে রাশিয়া এবং চীন সমর্থন করতে পারে আর্ন্তজাতিক রাজনীতির অংশ হিসেবে।

লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা নাইজার ইকোয়াস সংঘাত এবং নাইজারের সামরিক শক্তি সম্পর্কে জানলাম। আপনাদের নাইজার ইকোয়াস সংঘাত সম্পর্কিত যে কোন মতামত আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যবহুল পোষ্ট পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পরেন। ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা